ঢেউয়ের আঁচড় আর মাছের কামড় সহ্য করে পুনর্জীবনের গল্প শোনালেন নামখানার মৎসজীবী

  • ৬ জুলাই ঘটেছিল সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা
  • কাকদ্বীপের একদল মৎস্যজীবী পাড়ি দিয়েছিলেন সমুদ্রে
  • খোঁজ মিলেছে তাদেরই একজনের
  • তিনি শোনালেন তাঁর পুনর্জীবনের কাহিনি

Indrani Mukherjee | Published : Jul 13, 2019 1:25 PM IST

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কাকদ্বীপে নারায়ণপুরের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস ওরফে কানু গত ৩ জুলাই এফবি নয়ন ট্রলারে করে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন গভীর সমুদ্রে। গত শনিবার খারাপ আবহাওয়ার জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগর। যার ফলে ডুবে যায় সেই ট্রলার। মোট ২৫ জন মৎস্যজীবী নিখোঁজ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবুও। বাকিদের খোঁজ না মিললেও আশ্চর্যজনকভাবে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। 

বুধবার সকালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কাছে ওই মৎস্যজীবীকে জলে ভাসতে দেখে তাঁকে উদ্ধার করে বাংলাদেশি একটি জাহাজ। তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় পাঁচ দিন ধরে সমু্দ্রের জলেই ভাসার পর যাঁর কার্যত বেঁচে থাকার কথাই নয়, সেই রবীন্দ্রনাথ দাস শোনাচ্ছিলেন তাঁর পুনর্জন্মের কথা। 

সমুদ্রের ওপর ঝোড়ো হাওয়ার খড়কুটোর মতো করে ভেসে যাচ্ছিল সবকিছু, ভেসে যাচ্ছিলেন একে এক তাঁর সকল সঙ্গীও, কিন্তু হাল ছাড়েননি রবীন্দ্রনাথ বাবু। একনাগাড়ে ধরে রেখেছিলেন সেই বাঁশের টুকরো। তবে  এক গলা নোনা জলে ডুবে থেকেও বৃষ্টি যেন তাঁর প্রাণ বাঁচিয়ে রাখতে  আরও অনেকটাই সাহায্য করেছে। যখনই গলা শুকিয়ে  এসেছে, তখনই খেয়েছেন বৃষ্টির জল। ঢেউয়ের দাপটে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁর শরীর, সেইসঙ্গে সামুদ্রিক মাছের ঝাঁকও বসিয়েছে কামড়। এতকিছু সহ্য করেও তিনি বেঁচে থাকার জন্য চালিয়ে গিয়েছেন সংগ্রাম। দিন গেছে, রাত নেমেছে, তবুও ভেসে চলেছেন তিনি। যখনই হাল ছাড়ার কথা মনে পড়েছে তখনই বাড়িতে থাকা মা-বাবা ও স্ত্রী সন্তানদের কথা মনে পড়েছে তাঁর। তখনই আবার মনকে শক্ত করে ভেসে চলেছিলেন সেই বাঁশের ওপর ভর করেই। 

একটি সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন যে, একে একে তার সব সঙ্গীর হাত ছেড়ে যাচ্ছিল। তবে তাঁর সঙ্গে বেঁচে থাকার আরও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন 'ভাইপো' নামে আর একজন। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, বুধবার ঠিক যে সময় তাঁকে দেখতে পান জাহাজের নাবিকরা তার ঠিক ঘণ্টা তিনেক আগেই হাল ছাড়েন ভাইপো। রবীন্দ্রনাথবাবুর গলায় আফশোসের সুর যে, আর কিছুক্ষণ যদি সে থাকত, তাহলে সেও হয়তো বেঁচে যেতে পারত। ভারতীয় হাই কমিশন সূত্রে খবর, এখন তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব তাঁর বাড়িতে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছে।

Share this article
click me!