দোকানে দোকানে পান্তা মরিচ ইলিশ খাওয়ার হিরিক। সুযোগ বুঝে হাজার দু হাজার দাম হেঁকে বসেন এই দিন দোকানদাররা। কবে থেকে চল এই ইলিশ মাছ আর পান্তা খাওয়ার?
বৈশাখের প্রথম দিন। বাংলাদেশের এমন বর্ণময় সাজ সারাবছর দেখা যায় না। গুলশন, রমনা পার্ক, কার্জন গেটের কাছে মানবশৃঙ্খল তো রয়েছেই, গোটা দেশ সেজে ওঠে নতুনকে আহ্বান জানাতে। দোকানে দোকানে পান্তা মরিচ ইলিশ খাওয়ার হিরিক। যেই দেখা গেল ঝোপ, ওমনি কোপ। সুযোগ বুঝে হাজার দু হাজার দাম হেঁকে বসেন এই দিন দোকানদাররা। কবে থেকে চল এই ইলিশ মাছ আর পান্তা খাওয়ার?
সংস্কৃতির সঙ্গে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রইলেও এই সংস্কারকে কিন্তু খুব বেশি নম্বর দিতে চাইছে না বাংলাদেশের প্রবীণরা। বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় দৈনিকে ছায়ানটের সভাপতি বিখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক সন্জীদা খাতুন মন্তব্য করছেন, একসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই ধরনের দোকান দিত। তাঁদের মতে নবজাগরণের অঙ্গ এই। সেই রেওয়াজ আজও চলছে। সাধারণ গ্রাম বাংলার উদযাপনে কোথাও ইলিশ নেই। থাকার কথাও নয়। এই মহার্ঘ্য বস্তুটি আজও খেটে খাওয়া মানুষের হাতের বাইরেই।"
কিন্তু গ্রাম বাংলার নববর্ষ ঠিক কেমন? উত্তরে যেন ছবি আঁকছেন বাংলাদেশের লোক গবেষক শামসুজ্জামান খান। তাঁর মতে, মবাংলায় নববর্ষের উৎসবই ছিল খুব ছোট আকারে। কৃষাণী আগের রাতে একটি নতুন ঘটে কাঁচা আমের ডাল ভিজিয়ে রাখতো, চাল ভিজিয়ে রাখতো। সকালে কৃষক সেই চাল পানি খেত এবং শরীরে কৃষাণী পানিটা ছিটিয়ে দিত। তারপর সে হালচাষ করতে যেত। দুপুরবেলায় পান্তা খেতে পারতো কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে। কখনো কখনো একটু শুটকি, একটু বেগুন ভর্তা ও একটু আলু ভর্তা দিয়ে খেত।
প্রসঙ্গত এই ব্র্যন্ড পান্তা-ইলিশকে ২০১৩ সালে বর্জন করার ডাক দিয়েছিল পান্তাপিয়া বলে এক গোষ্ঠী। তাপা ইলিশের বিকল্প হিসেবে তেলাপিয়াকে বেছে নিয়েছিল। এই উদ্যোগ বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তবে মিথ ভাঙতে সবচেয়ে সাহায্য করেছে হাসিনা সরকারের পদক্ষেপ।
খোকা ইলিশ ধরে বিপুল দামে বিক্রির হুজুগ রুখতে প্রতি বছর প্রচার চালাচ্ছে হাসিনা সরকার। তাতে কাজও হয়েছে। প্রজননকালে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায় সুদিন দেখছেন জেলেরাও। বর্ষা এলে সস্তায় ইলিশ পাবে আমজনতাও।
রমনা পার্কের হুজুগে পান্তা ইলিশ খাওয়া চলুক বা না চলুক, এমন চললে এক দিন হয়তো গোটা বাংলাদেশই এইদিন পান্তা ইলিশ খাবে। সেই সুদিনের দিকেই চেয়ে আছে বাংলাদেশ।