ধর্ষণের অভিযোগে গ্রফতার হল গায়ক সৌম্য চক্রবর্তী। ৫ মে তার বিরুদ্ধে কাশীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এক তরুণী। তাঁর বয়ান অনুসারে, দক্ষিণেশ্বরে নিজের ফ্ল্যাটে সৌম্য ওই তরুণীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
পুলিশকে দেওয়া বয়ানে ওই তরুণী জানিয়েছেন, বহুদিন আগে থেকেই সৌম্য-র সঙ্গে তাঁর বাবার পরিচয়। সৌম্যদের আদি বাড়ি জেলাতে। সেখানেই আর্থিকভাবে দূর্বল সৌম্যকে গান-বাজনায় সহায়তা করার জন্য ওই তরুণী-র বাবা নানা সময়ে সাহায্য করেছিলেন।
এমনকী, ওই তরুণী সৌম্য-কে কার্যত নিজের রক্ত-সম্পর্কের দাদা হিসাবেও মানতেন। রাখি থেকে ভাইফোঁটা-তে সৌম্য-কে রাখি পরিয়েছেেন, ফোঁটাও দিয়েছেন। সম্প্রতি ওই তরুণী পড়াশোনার সূত্রে বিটি রোডের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সৌম্য যখন সারেগামাপা-র বিজয়মঞ্চে জয়ী হয়েছিল তা প্রত্যক্ষ করতেও ওই তরুণী এবং তাঁর বাবাও সেই শো-এর দর্শকাসনেে ছিলেন।
কলকাতায় সৌম্য তাঁর ঠিকানা ওই তরুণী-কে দিয়েছিল। সৌম্য তাঁর ফ্ল্যাটে আসার জন্য বহুবার ওই তরুণীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তরুণীর অভিযোগ, নিজের দাদা-র মতো মনে করেই সৌম্য-র দক্ষিণেশ্বরের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু গিয়ে দেখেন ফ্ল্যাটে সৌম্য একা। বাড়িতে তাঁর মা-ও নেই। তরুণী এরপর চলে আসার জন্য পীড়াপিড়ি করতে থাকেন। কিন্তু, সৌম্য বারবার নানা কথাা বলে তরুণীর যাওয়া আটকে দেয় বলে অভিযোগ। এরইমধ্যে গল্প করার ছলে সৌম্য তাঁকে নেশার ওষুধ মেশানো ঠান্ডা পানীয় দেয় বলে পরে অভিযোগে জানায় তরুণী। তাঁর আরও অভিযোগ, তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। পরে জ্ঞান ফিরলে দেখেন তাঁর শরীরে পোশাক নেই। সৌম্য তাঁকে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখায় বলে অভিযোগ। তরুণীর আরও অভিযোগ, ওই ভিডিওতে তিনি দেখেন সৌম্য তাঁকে ধর্ষণ করছে।
এই ভিডিও-র কথা বাইরে জানাজানি হলে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে শেষ করে দেওয়ারও হুমকি নাকি দিয়েছিল সৌম্য। এরপর থেকেই সৌম্য-র অত্যাচার নাকি আরও চরমে পৌঁছয়। যখন-তখন ওই ভিডিও-র জুজু দেখিয়ে তরুণীকে ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠাত সৌম্য। অভিযোগ, এই ভিডিও-র ব্ল্যাাকমেলিং করে সৌম্য এরপরও প্রায় বছর খানেক ধরে ওই তরুণীর উপরে শারীরিক নির্যাতন চালায়।
উপায় না দেখে ওই তরুণী কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। শেষমেশ তরুণীর বাবা কিছু চরম ঘটনা ঘটেছে বুঝতে পেরে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। তরুণী তাঁর বাবা-কে সৌম্য-র সমস্ত কীর্তি খুলে বলেন। অভিযোগ, এরপর থানায় সৌম্য-র নামেও অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করেন ওই তরুণী এবং তাঁর বাবা। কিন্তু, পুলিশ সৌম্য-র বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই নেয়নি। জনপ্রিয় গায়ককে বদনাম করা হচ্ছে বলে পুলিশ পাল্টা জ্ঞান দিয়ে ওই তরুণী এবং তাঁর বাবা ফেরত পাঠিয়ে দেয় বলে বিশ্বস্তসূত্রে অভযোগ করা হয়েছে।
এরপর এক মন্ত্রীর দ্বারস্থ হন পিতা-পুত্রী। রাজ্য সরকারের সেই প্রভাবশালী মন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই অবশেষে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করতে রাজি হয়। এরপরই পুলিশ যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারের ঘটনার তদন্ত শুরু করে। কাশীপুর থানাতেও অভিযোগ দায়ের করা হয়। যার ভিত্তিতে গ্রেফতার হয় সৌম্য চক্রবর্তী। যদিও, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে এখনও কোনও সরকারি বয়ান দেয়নি সৌম্য।
রবিবার সৌম্যকে গ্রেফতার করে কাশীপুর পুলিশ। সোমবার শিয়ালদহ কোর্টে কেস উঠলে সৌম্য চক্রবর্তীকে পুলিশি হেফাজতে রাখার রায় দেন বিচারপতি। যদিও গায়কের পক্ষের উকিলের মুখে শোনা যায় অন্য সুর। তিনি প্রশ্ন করেন ২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া কেনও এতদিন পর।
প্রসঙ্গত, সৌম্য চক্রবর্তী হলেন বাংলার রিয়ালিটি শো জগতের এক অন্যতম নাম। দেশের প্রথম সারির সঙ্গীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দর্শকের মন জয় করেছিলেন তিনি। ১লা জুন পর্যন্ত শ্রীঘরে থাকতে হচ্ছে সৌম্যকে।