কিশোরের যখন ন'বছর বয়স তখন স্কুলের ছুটি কাটাতে তিনি বোম্বাই এলেন। ঠিক সেই সময় 'অচ্ছুতকন্যা' ছবির সাফল্যের কারনে একটা পার্টি দিয়েছিলেন রায়বাহাদুর চুনিলাল। ওই পার্টিতে রাজ্যপাল আসার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর আসতে দেরি হচ্ছিল বলে অশোককুমার তাঁর ছোট ভাই কিশোরকে গান গাইতে বলেন। ন'বছরের কিশোর সেদিন কেএল সাইগলের গান গেয়ে সেদিনের পার্টির সবাইকে মুগদ্ধ করে দেয়। ওই পার্টিতে হাজির ছিলেন হিমাংশু দত্ত, দেবিকারানি, শশধর মুখার্জির মতো সিনেমা ব্যক্তিত্ব। ওঁরা সবাই সেদিন ন'বছরের কিশোরের গান শুনে মুগ্ধ। ওই পার্টিতে হাজির ছিলেন 'অচ্ছুতকন্যা'-র সঙ্গীত পরিচালক সরস্বতী দেবী।
কিশোর কুমার, যার গানের সুরে বিশ্বভুবনে সকলের মুগ্ধ। তিনি যে কতটা মজার মানুষ ছিলেন তা অনেকেই জানেন। বিশেষত যারা তারা সান্নিধ্যে আসার পরম সৌভাগ্য পেয়েছেন তাদের কলমে উঠে এসেছে গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকারের বর্ণময় জীবনের কাহিনি। শুনে শুনে গান গান গলায় তুলে নেওয়া তাঁর কাছে কোনও ব্যাপার ছিল না। বিশেষ করে সে গান যদি হয় সায়গলের। সেই ফেভারিট হিরোর সঙ্গে দেখা করার আশা নিয়েই বোম্বাই এসেছিলেন। দাদা অশোককুমার তখন বম্বে টকিজের অন্যতম কর্ণধার। বোম্বাই সিনেমা দুনিয়ায় অভিনেতা হিসাবে অশোককুমার তখন একটা নাম তো বটেই। তাই ছোট ভাইয়ের জন্য কাজে লাগার মতো সুযোগ যে যথেষ্ট সে কথা বলাই বাহুল্য।
কিশোরের যখন ন'বছর বয়স তখন স্কুলের ছুটি কাটাতে তিনি বোম্বাই এলেন। ঠিক সেই সময় 'অচ্ছুতকন্যা' ছবির সাফল্যের কারনে একটা পার্টি দিয়েছিলেন রায়বাহাদুর চুনিলাল। ওই পার্টিতে রাজ্যপাল আসার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর আসতে দেরি হচ্ছিল বলে অশোককুমার তাঁর ছোট ভাই কিশোরকে গান গাইতে বলেন। ন'বছরের কিশোর সেদিন কেএল সাইগলের গান গেয়ে সেদিনের পার্টির সবাইকে মুগদ্ধ করে দেয়। ওই পার্টিতে হাজির ছিলেন হিমাংশু দত্ত, দেবিকারানি, শশধর মুখার্জির মতো সিনেমা ব্যক্তিত্ব। ওঁরা সবাই সেদিন ন'বছরের কিশোরের গান শুনে মুগ্ধ। ওই পার্টিতে হাজির ছিলেন 'অচ্ছুতকন্যা'-র সঙ্গীত পরিচালক সরস্বতী দেবী। লখনউয়ের মরিস কলেজ অধুনা ভাতখণ্ডে মিউজিক কলেজের ছাত্রী সরস্বতী দেবী বোম্বাই সিনেমার প্রহম মহিলা সঙ্গিত পরিচালক। সরসবতি দেবির সুরে যখন রূপালী পর্দায় গাইতেন 'খেত কি মুলি, বাগ কে আম'-তখন নাকি প্রেক্ষাগৃহের ঘুমিয়ে পড়া সবাই জেগে উঠে গলা মেলাতেন। কথিত জওহরলাল, তার মেয়ে ইন্দিরা ও সরজিনি নাইডু ‘অচ্ছুতকন্যা’ দেখতে এসেছিলেন। সরজিনী নাকি গানের সময় জানতে চেয়েছিলেন এই ছেলেটি কে? বড় ভাল গাইছে তো...! বম্বে টকিজের 'জীবন প্রভাত', 'ভাবি', 'কঙ্গন', 'বন্ধন', 'ঝুলা'প্রভৃতি ছবির সুরকার ছিলেন তিনি। সেদিনের পার্টিতে কিশোরকুমারের গান মন দিয়ে শুনেছিলেন সরস্বতী দেবী। বম্বে টকিজের ছবি 'জন্মভূমি'র গান রেকর্ডিঙ্গের সরস্বতী দেবী অশোককুমারকে একান্তে বলেছিলেন, ছেলেটিকে মিউজিক রেকর্ডিং রুমে পাঠিয়ে দিতে। অশোককুমার সম্মত হননি।
অশোককুমার চাননি তাঁর ছোটভাই ফিল্মের দুনিয়ায় জড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু সরস্বতী দেবী তার ইচ্ছেপূরন করেছিলেন। 'জন্মভূমি' ছবির একটি কোরাস গানে গলা মিলিয়েছিলেন কিশোরকুমার। এটাই কিন্তু কিশোরকুমারের ছবির গানে গলা দেওয়ার সূত্রপাত। সেদিন ওই কোরাস গানে গলা দিয়েছিলেন পরবর্তীকালের আরেক দিকপাল সুরকার মদনমোহন। এরপর কিশরকুমার প্রথম প্লে-ব্যাক করেন বম্বে টকিজের ছবি 'জিদ্দি' তে। ছবির অভিনেতা দেবানন্দ এবং গায়ক কিশরকুমার দু'জনকেই সুযোগ দিয়েছিলেন অশোককুমার। 'জিদ্দি' ছবিতে কিশোরকুমার প্রথম কন্ঠ দেন দেবানন্দের লিপে। সে ছবির সুরকার ছিলেন খেমচন্দ প্রকাশ। তাঁর সুরেই প্রথম কিশোরকুমার প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৪৮ সালে কিশোরকুমারে গাওয়া সেই গানটি ছিল, 'মরণ কি দুয়ায়ে কিউ মাঙ্গু'। এর আগে কয়েকটি ছবিতে তিনি মুখ দেখিয়েছেন, গলাও মিলিয়েছেন। কিন্তু সেগুলি উল্লেখের দাবি রাখে না। 'জিদ্দি' ছবিটা না চললেও কিশোর অভিনেতা এবমগ গায়ক হেসাবে ডাক পেয়েছেন।