রুপালি পর্দার ঝলমলে অবয়বে তাঁরা যোগ করেন কত নতুন রং। কিন্তু তাঁরাই একদিন ব্যক্তি জীবনে বেঁচে থাকার রঙ হারিয়ে ফেলেন। ক্রমেই আপন ভুবন বিবর্ণ আর নিষ্প্রাণ হয়ে ওঠে। বেঁচে থাকার আর কোনও কারণ খুঁজে পান না তাঁরা। তাই খ্যাতি যশ তুচ্ছ করে আপনজনের মায়া পিছনে রেখে বেছে নেন আত্মহননের পথ।
তারকা ভুবনের বাসিন্দাদের জীবন হটাৎ একদিন দপ করে নিভে গেলে, সংগত কারণেই চমক লাগে, ভাবনা হয়। আজ থেকে ৫৬ বছর আগেও বলিউড তোলপাড় হয়েছিল গুরু দত্তের মৃত্যুতে। সম্পর্কের টানাপড়েন অথবা রিল আর রিয়েল লাইফের ফারাক অথবা অন্য কোনও কারনে মানসিক অবসাদ আর তার ঠেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন প্রযোজক-পরিচালক ও অভিনেতা গুরু দত্ত।
এর ৩০ বছর পর আরও একটি ঘটনায় গালে হাত দিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছিল বলিউড। ১৯৯৪ সালের ১ মার্চ খ্যাতনামা প্রযোজক-পরিচালক মনমোহন দেশাই নিজের বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তখন তার ঝুলিতে ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘কুলি’, ‘নসিব’, ‘মর্দ’, ‘ধরম বীর’-এর মতো সুপার হিট ছবি।
মানসিক অবসাদ কিংবা অন্য সমস্যা, যা কেবল ব্যাকগ্রাউন্ডেই ঘটে চলে। কিন্তু আত্মহত্যার মতো ঘটনা বার বার দেখতে হয় বলিউডকে। সদ্য সুশান্ত সিংহ রাজপুত। তালিকায় আছে আরও নাম।
আজকের বলিউড ছবির অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘আইটেম নাম্বার’ তাঁর হাতেই গড়া। বলিউড ছবিতে অভিনয় করলেও মূলত সিল্ক স্মিতা খ্যাত ছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় ছবির জন্যই। সামান্য ভূলিকা দিয়ে শুরু করে ওই সময়ে পুরো ভারতের সবচেয়ে আলোচিত অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ের অ্যাপার্টমেন্টে সিল্ক স্মিতার মৃতদেহ পাওয়া যায় সিলিং ফ্যানে ঝোলানো অবস্থায়। অতিরিক্ত মদ্য পান, ব্যর্থ প্রেম, অর্থনৈতিক দুরবস্থা তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তাঁর জীবন নিয়েই তৈরি ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এ বিদ্যা বালান অভিনয় করেছিলেন তাঁর চরিত্রে।
বলিউডের একসময়কার সবচেয়ে আবেদনময়ী অভিনেত্রী পারভিন ববি। অনস্ক্রিনের ববি যতটা ঝলমলে ছিলেন, ব্যক্তিজীবনে হয়ে পড়েছিলেন তেমনই ম্রিয়মাণ। অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে একসময় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সেলিব্রেটি নায়িকাদের আত্মহত্যার তালিকায় সাম্প্রতিক নাম জিয়া খান। অল্প দিনের ক্যারিয়ারে অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার ও আমির খানের মতো তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘নিঃশব্দ’, ‘গজিনী’-র মতো দুর্দান্ত ছবি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারে। জুহুর ফ্ল্যাটে সিলিং ফ্যানে ঝোলানো অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায় ২০১৩ সালের ৩ জুন। তাঁর সুইসাইড নোটে উল্লেখ ছিল আদিত্য পাঞ্চোলির ছেলে সুরজ পাঞ্চোলির সঙ্গে সম্পর্কের কথা।
বিশেষ ভাবেই বলতে হয় দিব্যা ভারতীর কথা। ক্যারিয়ারের শীর্ষ পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছিলেন এই টিনএজ অভিনেত্রী। মাত্র ১৬ বছরে শুরু করেন অভিনয়, মারা যান ১৯ বছর বয়সে। এর মধ্যে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পেয়েছিলেন ‘দিওয়ানা’ ছবির জন্য। মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছিলেন ২১টি ছবিতে। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল নিজের অ্যাপার্টমেন্টের জানালা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।