এমনটা যে হতে পারে তা কল্পনা করতে পারছিলেন না চারলিয়ান ব্রডহার্স্ট। তাঁর মনে হচ্ছিল শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে। মাথা ঝিম মেরে রয়েছে। মনে হচ্ছিল শরীরটা ছেড়ে দিচ্ছে। ঘরে তিন মেয়ে। তারা সকলেই একদম ছোট। এই পরিস্থিতিতে একজন সিঙ্গল মাদার হিসাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন চারলিয়ান। নটহ্যাম্পটনশায়ারের ওয়েলিনবার্গ-এ বাড়ি তাঁর। ইংল্যান্ডের এই অঞ্চলটি বনেদি কাউন্টি এলাকা হিসাবেই পরিচিত। ফলে, অনেকটা দূর-দূর বসতি। চারলিয়ান তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের বিপদটা আঁচ করতে পারছিলেন। শেষমেশ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ক্লিনিকে তিনি জানতে পারেন তাঁর শরীর খারাপে-র আসল কারণ। চিকিৎসক জানান ফের মা হতে চলেছেন চারলিয়ান।
২৮ বছরের ব্রিটিশ যুবতীর চোখে-মুখে তখন শুধুই অবিশ্বাস। আনন্দে শরীর কাঁপছে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব! বিশ্বাস হচ্ছিল না চারলিয়ান। আঁচ করতে পারছিলেন সেই রাতের উষ্ণতা। যে রাতে আচমকাই তিনি রিয়ান হিল-এর সঙ্গে উদ্দাম যৌনতায় মেতেছিলেন। চারলিয়ানের কথায়, মাত্র এক রাতের যৌন সম্ভোগে যে তিনি মা হতে পারেন তা তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অবাক হওয়ার পালা আরও ছিল চারলিয়ানের। যখন তিনি জানতে পারেন যে তাঁর গর্ভে রয়েছে এক বা দুটি নয় একসঙ্গে তিনটি সন্তানের ভ্রুণ। আনন্দে সেই ক্ষণে কেঁদেই ফেলেছিলেন তিনি।
বাড়ি ফিরে এসে রিয়ান-কে ফোনে বিষয়টি জানান চারলিয়ান। তাঁর কথায় রিয়ান এতটাই খুশি হয়েছিল যে নিজের গাড়ির উপরে ঘুষি মারতে শুরু করে। আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছিল আনন্দে গাড়িটাই না ভেঙে দেয় রিয়ান।
আসলে রিয়ানের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলনের বন্দোবস্ত ভগবান করে রেখেছিল বলেই এখন বিশ্বাস করেন চারলিয়ান। কারণ, রিয়ানের সঙ্গে ছোট্টবেলা থেকে একসঙ্গে বড়ো হয়েছেন। চারলিয়ানের ষোল বছর বয়সে রিয়ান তাঁক প্রোপোজ করেছিলেন। বড় হয়ে রিয়াানের সঙ্গেই দাম্পত্য জীবনও শুরু করেছিলেন চারলিয়ান। বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার আগেই রিয়ানের সঙ্গে চারলিয়ানের তিন মেয়ে রয়েছে। যাদের নাম কাসি-লি, যার বয়স আট। কায়রা-জে, যার বয়স সাত এবং সিয়েনা, যার বয়স পাঁচ।
চারলিয়ানের কথায়, রিয়ানের সঙ্গে বিচ্ছেদটা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। ভেবে পাচ্ছিলেন না রিয়ান-কে ছাড়া তিনি কীভাবে সন্তানদের বড় করে তুলবেন। রিয়ানেরও নাকি একই পরিস্থিতি হয়েছিল। এরপরই রিয়ানের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ-এর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু, সাক্ষাৎ এমন একটা পরিস্থিতি-র মধ্যে দুজনকে ঠেলে দেয় যে কেউ-ই তাঁদের আবেগ-কে বেঁধে রাখতে পারেননি। বহুদিন পরে রিয়ান-কে সামনে পেয়ে চারলিয়ান যেন ভরসা পেয়েছিলেন। রিয়ান-কে তিনি আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলেন। রিয়ানও পারেননি চারলিয়ানের সামনে নিজেকে আটকে রাখতে। দুই প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী সেই রাত-কে স্মরণিয় করে রাখতে চেয়েছিলেন।
চারলিয়ান জানিয়েছেন, আসলে ভগবান চাননি আমরা আলাদা হই। তাই তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছেন। তিন যমজ সন্তানের জন্মও দিয়েছেন চারলিয়ান। এতে দুটি ছেলে এবং কন্যা সন্তানের মাতা-পিতা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে চারলিয়ান এবং রিয়ানের। দুজনেই এখন তিন যমজ সন্তানের দেখভাল করছেন। চারলিয়ানের সময় কেটে যাচ্ছে তিন যমজ সন্তানকে ব্রেস্টফিডিং করিয়ে এবং তাদের কাঁথা বদল করেই। তাঁর সঙ্গে ভাই ও বোনেদের দেখভালে হাত লাগিয়েছে তিন দিদিও। রিয়াানও সারাক্ষণ পড়ে রয়েছেন চারলিয়ানের সঙ্গে। খুব শিগরি তাঁরা ফের এক হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন রিয়ান।