
Financial Planning Tips for New Year: নতুন বছর এলেই মনে প্রথম প্রশ্ন আসে, এই বছর টাকা কীভাবে ম্যানেজ করব যাতে মাসের শেষে পকেট খালি না হয়ে যায়? মূল্যবৃদ্ধি, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, EMI, চিকিৎসার খরচ এবং ভবিষ্যতের চিন্তা… সবকিছু একসাথেই চলতে থাকে। যদি বছরের শুরুতেই সঠিক বাজেট প্ল্যান তৈরি করে নেওয়া যায়, তাহলে সারা বছর টাকা নিয়ে টেনশন অনেকটাই কমে যেতে পারে। এখানে নতুন বছরের জন্য একটি বাজেট প্ল্যানিং চেকলিস্ট দেওয়া হল, যা সাধারণ পরিবার এবং চাকরিজীবীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোনো সমস্যা ছাড়াই তারা তাদের টাকা আরও ভালোভাবে ম্যানেজ করতে পারেন।
বাজেট তৈরির শুরুটা সবসময় এই প্রশ্ন দিয়ে করুন যে আপনার কাছে সারা বছরে মোট কত টাকা আসবে। এর মধ্যে বেতন, ফ্রিল্যান্সিং, ব্যবসার আয়, ভাড়া, সুদ বা অন্য কোনো সাইড ইনকাম.. সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করুন। যখন আপনার মোট আয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকবে, তখনই আপনি সঠিক পরিকল্পনা করতে পারবেন।
প্রায়শই মানুষ জানেন না যে তাদের টাকা কোথায় উড়ে যায়। গত ৬-১২ মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট এবং UPI খরচের বিবরণ দেখুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কোন খরচগুলো প্রয়োজনীয় ছিল আর কোনগুলো অপ্রয়োজনীয়। এখানেই সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়ের সুযোগ থাকে।
সব খরচই কিন্তু জরুরি নয়। বাড়ির রেশন, বিদ্যুতের বিল, ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফি-র মতো খরচগুলো প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে, অন্যদিকে বারবার বাইরে খাওয়া, অনলাইন শপিং এবং অপরিকল্পিত ভ্রমণ ইচ্ছার মধ্যে পড়ে। যখন দুটোকে আলাদা করে ফেলবেন, তখন খরচ নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে।
যদি হোম লোন, পার্সোনাল লোন বা ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া থাকে, তবে তা উপেক্ষা করবেন না। নতুন বছরে চেষ্টা করুন উচ্চ সুদের ঋণগুলো আগে শোধ করার। এতে আপনার মাসিক টেনশনও কমবে এবং সঞ্চয়ের জন্য জায়গা তৈরি হবে।
প্রায়শই মানুষ বলেন যা বাঁচবে, তাই সঞ্চয় করব। কিন্তু সঠিক উপায় হল, আগে সঞ্চয় করুন, তারপর খরচ। বেতন পেলেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্ট, RD বা SIP-তে জমা করে দিন। এতে টাকা খরচ হওয়ার আগেই সুরক্ষিত হয়ে যায়।
চাকরি চলে যাওয়া, চিকিৎসার খরচ বা কোনো আকস্মিক প্রয়োজন, না বলেই আসে। তাই নতুন বছরে অন্তত ৩ থেকে ৬ মাসের খরচের সমান একটি জরুরী তহবিল তৈরি করা আবশ্যক। এটি আপনাকে কঠিন সময়ে ঋণ নেওয়া থেকে বাঁচাবে।
যদি আপনার স্বাস্থ্য বীমা না থাকে, তবে নতুন বছর শুরু হতেই অবশ্যই নিয়ে নিন। যাদের আগে থেকেই পলিসি আছে, তারা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখুন যে আজকের মুদ্রাস্ফীতির হিসাবে কভারেজ যথেষ্ট কিনা। জীবন বীমাও পরিবারের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সন্তানদের পড়াশোনা, বিয়ে, বাড়ি কেনা বা অবসর গ্রহণ.. এই সবই বড় লক্ষ্য, যার জন্য সময় থাকতে পরিকল্পনা করা জরুরি। SIP-এর মতো ছোট ছোট বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি বড় স্বপ্নগুলোকে সহজ করে তুলতে পারেন।
শুধু বাজেট তৈরি করলেই হবে না, তা অনুসরণ করা এবং প্রতি মাসে পর্যালোচনা করাও জরুরি। মাসের শেষে দেখুন কোথায় খরচ বেশি হয়েছে এবং কোথায় নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এতে পরের মাসটা আরও ভালো যাবে।
আজকাল অনেক বাজেট এবং খরচ ট্র্যাক করার অ্যাপ রয়েছে, যা আপনার খরচকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন বিভাগে দেখিয়ে দেয়। এতে টাকার হিসাব রাখা সহজ হয়ে যায় এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে।
বাজেটের অর্থ এই নয় যে জীবনের আনন্দই শেষ হয়ে যাবে। নিজের জন্যও একটি ছোট 'ফান বাজেট' রাখুন। সিনেমা, ভ্রমণ বা শখের জন্য আলাদা বাজেট তৈরি করুন। মনে রাখবেন, যখন সবকিছু ভারসাম্যের মধ্যে থাকে, তখনই বাজেট সফল হয়।
ডিসক্লেমার: এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য এবং সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এখানে দেওয়া বাজেট পরিকল্পনা এবং আর্থিক টিপস কোনো ধরনের পরামর্শ নয়। যেকোনো ধরনের বিনিয়োগ, ঋণ বা আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার আর্থিক উপদেষ্টা বা বিশেষজ্ঞের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করুন।