Stock Market Scam: বর্তমানে টিভি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে শেয়ার মার্কেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। একইসঙ্গে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেড়েছে জালিয়াতিও। তাও অভিনব কায়দায়। জালিয়াতি করার জন্য প্রথমে ফাঁদ পাতা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন পরিচিত শেয়ার ব্রোকারদের রিলস একই নামের অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হচ্ছে। পরে সেখানেই কমেন্টে টেলিগ্রাম চ্যানেলের লিঙ্ক শেয়ার করে সেখানে জয়েন করার অনুরোধ করা হচ্ছে। এবারই শুরু হচ্ছে আসল খেলা। কিন্তু যাঁদের নাম করে এই জালিয়াতি হচ্ছে, তাঁরা হয়তো এ বিষয়ে আদপেও কিছু জানেন না।
প্রথমেই যেটা নজরে পড়বে, তা হল কোনও সাবস্ক্রাইবার সেখানে কমেন্ট করতে পারবেন না। অর্থাৎ কমেন্ট করার কোনও অপশন নেই। কারণ কেউ যদি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সে ক্ষেত্রে অন্যরা সাবধান হয়ে যাবেন। ফলে শুরুতেই সেখানে কমেন্ট ডিসেবল করে রাখছে সাইবার ঠগরা। এবার শুরু হয় লোভ দেখানোর খেলা। সামান্য টাকা বিনিয়োগ করে বিরাট অঙ্কের লাভ দেখানো হয়। যেমন ধরুন, ৫ হাজর টাকা বিনিয়োগ করে দিনের শেষে রিটার্ন দেখানো হচ্ছে ১৫ হাজার। লাভের উপর ৩০ শতাংশ কমিশন কেটে বাকি টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এমনটাই জানানো হয় টেলিগ্রাম পোস্ট।
যারা যারা লোভে পড়বেন, তাদের একটি বা দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া হবে টেলিগ্রাম লিঙ্কের সঙ্গে। সেখানে শুরু হবে কথোপকথন। বিনিয়োগকারীকে জিজ্ঞাসা করা হবে কীভাবে তিনি বিনিয়োগ করার টাকা পাঠাবেন। স্ক্যানার বা ইউপিআই বা সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা পাঠানো যাবে। টাকা একবার পাঠিয়ে দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীকে দিনভর অপেক্ষা করতে বলা হবে।
দুপুরের মধ্যে আপনার কাছে আপনার সমস্ত ডিটেলস জানতে চাওয়া হবে। যেমন, আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ইউপিআই আইডি, IFSC কোড, GPay বা PhonePe নম্বর ইত্যাদি ইত্যাদি। সন্ধ্যায় আপনার কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন আসবে। দেওয়া হবে নানা অজুহাত। যেমন সার্ভার ডাউন রয়েছে, শর্ট সার্কিট হওয়ার কারণে টাকা পাঠানো যায়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। লোভের কারণে বা টাকা হারানোর ভাবনায় সাধারণ মানুষের মাথাও তখন ঠিকমতো কাজ করে না। তা না হলে সহজেই বোঝা যায়, শর্ট সার্কিটের কারণে কখনও অনলাইন পেমেন্ট আটকায় না, আটকানোর কথাও নয়।
দিন গড়িয়ে পরদিন সকাল। বিনিয়োগকারীও আশায় থাকবেন, এবার বোধহয় বহুকাঙ্ক্ষিত টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। ফের শুরু হবে হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন। এবার শেষ কামড় দেওযার চেষ্টা করবে ঠগরা। প্রথমেই আপনার সামনে ইনভয়েস নামক একটি ফটোশপ করা ছবি পাঠিয়ে বারিট অঙ্কের লাভ দেখিয়ে মাথা ঘোরানোর কাজ করবে জালিয়াতরা। তার মধ্যে ৩০ শতাংশ কমিশনের হিসেব দেখা যাবে বেশ কিছু টাকা। ধরা যাক কেউ যদি ৫ হাজার বিনিয়োগ করে থাকেন তাঁর কাছে প্রায় দ্বিগুন অঙ্কের কমিশন দেখানো হবে।
আপনি যদি বলেন, বিনিয়োগ করার পর সমস্ত টাকাই তো জালিয়াতদের কাছে রয়েছে, তবে এই লভ্যাংশ আলাদা করে চাওয়ার মানে কী! তখন আপনাকে বোঝানো হবে, যে পুরো টাকাটা একবারেই ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার হবে ১০ মিনিটের মধ্যে। এভাবে টাকা কাটার নিয়ম নেই। এখন যদি সম্বিত না ফেরে তবে আরও বড় জালিয়াতির শিকার হবেন আপনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোভের বশে মানুষ কমিশনের নামে বড় অঙ্কের টাকাও ট্রান্সফার করে দেন। তার পরই বেমালুম আপনার সমস্ত টাকা নিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় জালিয়াতরা।
অনেকে টাকা না পাঠিয়ে সরাসরি সেই বিখ্যাত শেয়ার ব্রোকারের সঙ্গে ফোনালাপ করার দাবিও জানান। কিন্তু তাতে কাজ তো হয়ই না, উল্টে শুনতে, তাদের মতো নগন্য মানুষের সঙ্গে কথা বলেন না মহামহিম সেই বিখ্যাত ব্রোকার। আসলে পুরোটাই সেই ব্যক্তির নামকে ব্যবহার করে ঠকানোর সম্পূর্ণ একটি চক্র যা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে লোভের ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করার মতলব এঁটেছে। এ সব ফাঁদের পড়ার আগে শুধু একটি সতর্কতার বাণী মনে রাখবেন, লোভে পাপ, আর পাপে কী, তা আফনারা ভালোই জানেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্যে একটি বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ, চট জলদি আর যাই হোক সম্পদ সৃষ্টি করা যায় না। এর জন্য লাগে সংযম, ধৈর্য্য এবং শৃঙ্খলা। দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে তবেই মেলে কাঙ্খিত ফল। তৈরি হয় ভবিষ্যতের নিধি। কিন্তু তার জন্য কোনও ঠগের পাল্লায় পড়ার প্রয়োজন নেই। নামী কোনও সংস্থার অ্যাপের (Groww, Zerodha, Motilal Oswal) মাধ্যমে খুব সহজেই বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।
যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই জালিয়াতের খপ্পরে পড়েন, তাকে ব্যবহার করেই হাতের সামনে AMC হাউজের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আপনার বাড়িতে এসে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে যাবেন তাঁরা। তাই লোভের ফাঁদে না পড়ে নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করে যান। আপনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন। আরও একটা বিষয় না বললে লেখআ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তা হল, শেয়ার বাজার বিরাট সাগরের মতো। যেখানে না জেনে সাঁতার কাটতে গেলে ডুবতেও পারেন। তাই ভালো মতো পড়াশোনা না করে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে কখনও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবেন না।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।