নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজারে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ প্রবেশ করার পর বিক্রি কমে গিয়েছে রেকিট বেঙ্কাইজার, ইউনিলিভার এবং কোলগেট-পামোলিভের মতো কোম্পানি গুলির। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউটরস ফেডারেশন ক্রেতা ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে একই বাজার দর ধরে রাখার দাবি জানিয়েছে।
কোনও জিনিসের দাম হলে মুখে হাসি ফোটাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনও কখনও আবার দাম কমের জন্যও পড়তে হয় বিপদে। এই রকমই এক ঘটনার সাক্ষী হল মুকেশ আম্বানির সংস্থা রিল্যায়েন্স(Reliance)। রিয়্যালেন্স কোম্পানির মোবাইল হোক বা জিও(Reliance Jio)-র মত ফোনের কানেকশন, সবেতেই জুড়ি মেলা ভার আম্বানি কোম্পানির(Mukesh Ambani)। রিল্যায়েন্স কোম্পানির ব্যবসা বহুদূর বিস্তৃত। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সমগ্রীর বাজারেও জাঁকিয়ে বসেছে মুকেশ আম্বানির সংস্থা। আর সেখানেই ঘটেছে বিপত্তি। অন্যন্য নামী দামী সংস্থার প্রোডাক্টের তুলনায় বেশ অনেকটাই কম দামে বিকোচ্ছে রিয়্যালেন্সের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য(Consumer Goods)। আর সেই জন্যই সমস্যায় পড়েছে অন্যান্য ভোগ্য পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটার সংস্থা গুলো(। পরোক্ষভাবে কর্মসঙ্কটে পড়েছেন ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থাগুলির বিক্রয়কর্মীরাDistributor company salesmen in crisis)। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজারে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ প্রবেশ করার পর বিক্রি কমে গিয়েছে রেকিট বেঙ্কাইজার, ইউনিলিভার এবং কোলগেট-পামোলিভের মতো কোম্পানি গুলির(Sales are declining)। সমস্যায় পড়েছে এই সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটররা। ছোট মুদিখানার দোকানগুলিতে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে এই বিক্রয়কর্মীরা। ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলির কাছে পাঠানো এক চিঠির উল্লেখ করে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিটি দোকান ঘুরে অর্ডার তোলাই এই বিক্রয়কর্মীদের কাজ। পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থা এবং মুদিখানার দোকানগুলির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমই হচ্ছে তারা। কাজেই বিক্রয়কর্মীরা দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মুদিখানার দোকানগুলিতে পণ্য সরবরাহ বা অর্ডার নেওয়ার কাজ বন্ধ করলে বিপাকে পড়বে ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। এই প্রসঙ্গে অবশ্য বলতে হয়, মুকেশ আম্বানির সংস্থা রিল্যায়েন্স জিয়োমার্ট অ্যাপের মাধ্যমে ক্রেতাদের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। রিল্যায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির কম দামে পণ্য পরিষেবার জন্য অন্যান্য সংস্থাগুলি রিয়্যালেন্সকে টেক্কা দিতে রীতিমতো নাকানি চোবানি খাচ্ছে। এর ফলে গত অর্থবর্ষে তাদের বিক্রি ২০-২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যমে জিয়োমার্ট পার্টনার অ্যাপ ব্যবহার করে সরাসরি রিলায়েন্সের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিচ্ছে মুদিখানাগুলি। বাজারের থেকে অনেকটাই কম দামে পণ্য পাওয়ার সুযোগে স্থানীয় মুদিখানার দোকানগুলির রিলায়েন্সের প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়ার প্রবণতা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। ফলে এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে বিক্রয়কর্মীরা। এর ফলে ভারতের প্রতিটি কোনায় ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলির তৈরি পণ্য বিক্রিতে সহায়তাকারী প্রায় সাড়ে চার লক্ষের বেশি বিক্রয়কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন-Jio Prepaid Plan: ১ ডিসেম্বর থেকে কর্যকর হচ্ছে Jio-এর নতুন মোবাইল প্রিপেড প্ল্যান, জেনে নিন বিস্তারিত
আরও পড়ুন-TRAI Report-স্বমহিমায় ফিরেছে জিও-র 4G ডাউনলোড স্পিড,4G চার্টের ডাউনলোড স্পিডের শীর্ষে জিও, বলছে TRAI
রয়টার্সের তরফে জানা যাচ্ছে, অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউটরস ফেডারেশন(All India Consumer Products Distributers Fedaration) ক্রেতা ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে একই বাজার দর ধরে রাখার দাবি জানিয়েছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে তাদের থেকে কম দামে পণ্য দিলে প্রত্যন্ত এলাকার মুদিখানার দোকানগুলিতে তা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছে চার লক্ষ সদস্যের এই সংগঠন। রিলায়েন্সের মতো অন্যান্য বড় কর্পোরেট ডিস্ট্রিবিউটরদের সমান দামে পণ্য বিক্রির দাবি তুলেছে তারা। চিঠিতে সংগঠন জানিয়েছে, আমরা দীর্ঘ বছর ধরে ভালো পরিষেবা দিয়ে নিজেদের একটা সুনাম এবং উপস্থিতি তৈরি করেছি। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা 'অসহযোগ' আন্দোলনের ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ধৈর্য্যশীল পাটিল বলেন, 'রেকিট, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, কোলগেট সমেত ২০টি ক্রেতা ভোগ্যপণ্য সংস্থার কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। দামের এই বিস্তর ফারাক না মিটলে তাদের বিক্রয়কর্মীরা ছোট মুদিখানার দোকানগুলিতে পণ্যের অর্ডার নেওয়া, বিক্রি করা এবং তা সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় পণ্য পরিবাহী গাড়ি এবং কর্মী কমিয়ে দিতে তারা বাধ্য হচ্ছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থাগুলি। সর্বোপরি রিয়্যালেন্স কোম্পানি সাধারণ ক্রেতাদের মুখে হাসি ফোটালেও সেই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হয় কিনা, সেটাই এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে।