নিজের কেরিয়ারের এক অজানা দিকের কথা সকলকে জানালেন ভারতীয় তথা আরসিবি (RCB) তারকা হার্শল প্যাটেল (Harshal Patel)। বর্তমানে সাফল্য পেলেও লড়াইয়ের সেই দিনের কথা আজও ব্যথিত করে হার্শল প্যাটেলের।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলকে ভারতীয় ক্রিকট দলে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ করে নেওয়ার এক যাদুকাঠি হিসেবে উঠে এসেছ। ২০০৮ সালে প্রথম মরসুমের এর প্রভাব খুব একটি বোঝা না গেলেো পরবর্তী বছরগুলিতে তা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। আগে ঘরোয়া ক্রিকেটই একমাত্র উপায় ছিল জাতীয় দলে সুযোগ করে নেওয়ার। তবে সেখানে রাজ্যের দলগুলিতে সব তরুণ ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেতেন না। কিন্তু সেই সুযোগটা করে দেয় আইপিএল। অনেক তরুণ ক্রিকেটারকে অন্ধকার গলি থেকে আলোর রাজপথের হদিশ দিয়েছে ভারতের কোটিপতি লিগ। সেই তালিকায় প্রধান নামগুলি হল জসপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়া, ক্রুণাল পান্ডিয়া, ইশান কিশান, হার্শল প্য়াটেল, টি নটরাজন, ভেঙ্কটেশ আইয়ররা। এই ক্রিকেটারদের জাতীয় দলের দরজা খুলতে একটি আইপিএল মরসুমই যথেষ্ট ছিল।
পয়সার যেমন দু-পিট থাকে। আইপিএলের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। একদিকে যেমন অনেক নতুন তারকা উঠে এসেছে আইপিএলের মঞ্চ থেকে তেমনই অনেক ক্রিকেটার হারিয়ে গিয়েছে কালের গহ্বরে। আবার বুমরা, হার্দিকরা যেমন এক সুযোগেই কেল্লাফতে করেছে ,ঠিক তেমনই এমন ক্রিকেটারও রয়েছে যাদের নিজেদরকে প্রমাণ করতে অনেকটা সময় লেগেছে। যার জন্য অনেক যন্ত্রণা বা আঘাত সহ্য করতে হয়েছে। তেমনই এক ক্রিকেটার হলেন হার্শল প্যাটেল। ভালো পারফর্ম করতে না পারার জন্য এক সময় তাকে বাড়ি পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিনেতা এবং ক্রিকেট উপস্থাপক গৌরব কাপুরের সঙ্গে তার ইউটিউব চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ডান হাতি মিডিয়াম পেসার।
হার্শল প্য়াটেল জানিয়েছেন,'২০১২ থেকে ২০১৭ সালে আমি প্রথম দফার জন্য আরসিবিতে ছিলাম। এই সময়কালে আরসিবির হয়ে ৩৪টি ম্য়াচে ৩৬টি উইকেট নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ৫টি খেলায় সুযোগ পেয়েছিলাম। তারপর আর সুযোগ পাইনি। ২০১৭তে একই অবস্থা। এক সময় আমাদের তৎকালীন কোচ ড্যানিয়েল ভেত্তোরি আমাকে ডেকে বলেন, আমরা আপনাকে আরও অন্তত ৪-৫ টি গেম খেলতে দেখছি না তাই আমরা আপনাকে বাড়িতে পাঠাচ্ছি। তবে আমরা আপনাকে আবার কল করব।' বাদ দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া হিসেবই এই ঘটনাকে বর্ণনা করেছেন হার্শল প্যাটেল। হোটেল রুম, দৈনিক ভাতা, ফ্লাইটের টিকিট এই সকল খরচ কমানোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন হার্শল।
এরপর হার্শল প্যাটেল আরও জানিয়েছেন,'৪-৫টি ম্যাচ পর প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছিল আরসিবি। শেষ চারে যাওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। সেই সময় আমি ভেত্তোরি স্যারকে ম্যাসেজ করি, আমাকে একটা খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। প্রথমবারের মতো আমি নিজেকে কারও কাছে বিক্রি করেছিলাম। তারা আমাকে ডেকেছিল। শেষ খেলায় দিল্লির বিরুদ্ধে আমাকে সুযোগ দিয়েছিল। ৪৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে আমি ম্য়াচের সেরা হয়েছিলাম।' প্রসঙ্গত, এরপর ২০১৮ থেকে ২০ দিল্লি হয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেন হার্শল। ২০২১ সালে ফের তাকে দলে নেয় আরসিবি। ৩২টি উইকেট নিয়ে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন তিনি। ২০২২ সালে মেগা নিলামে ১০.৭৫ কোটি টাকায় ফের তাকে কেনে আরসিবি। জাতীয় দলের হয়েও সুযোগ পেয়েছেন। এবার আইপিএলেও চুটিয়ে পারফর্ম করছেন। তবে এই সাফল্য এত সহজে আসেনি তা ভালো করেই জানেন হার্শল। আর ২০১৭ সালে তাকে বাড়িয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার ক্ষত এখনও ভোলেননি ভারতীয় পেসার।