বেনারসি শাড়ি আর সোনার গয়নায় সেজে ওঠে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির মেয়ে দুর্গা, দশমীতে বিসর্জনের আগে দিয়ে যায় কনকাঞ্জলি

রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহু টাকা উপার্জন করে ১২০ নম্বর মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে প্রাসাদোপম রামচন্দ্র ভবন নির্মাণ করেন। এই বাড়ির ঠাকুরদালানেই ১৮৬১ সালে স্ত্রী দুর্গাদাসীর অনুরোধে রামচন্দ্র শুরু করেন দুর্গাপুজো। 

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপর রামমন্দির বাসস্টপে নেমে মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে ঢুকে কয়েক পা গেলেই ডান দিকে রামচন্দ্র ভবন। শতাব্দীপ্রাচীন এই বাড়িতে ভোগ রান্না করেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা।একটি গরান গাছের ডাল দিয়ে পুজো করা হয় কাঠামো। সেই ডাল প্রতিমার সঙ্গেই নিরঞ্জন হয়।চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো নিয়ে লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার।


ইতিহাস- 
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদিপুরুষ রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি বহু টাকা উপার্জন করে ১২০ নম্বর মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে প্রাসাদোপম রামচন্দ্র ভবন নির্মাণ  করেন। এই বাড়ির ঠাকুরদালানেই ১৮৬১ সালে স্ত্রী দুর্গাদাসীর অনুরোধে রামচন্দ্র শুরু করেন দুর্গাপুজো। ইতিহাস বলছে, ঠাকুরদালানেই আগে তৈরি হত মূর্তি। সময়ের সরণী বেয়ে আজ উমা আসে কুমোরটুলি থেকে। 

Latest Videos

গরান গাছের ডাল এবং ইতিহাস-
এখানে কাঠামোপুজো অনুষ্ঠিত হয় জন্মাষ্টমী তিথিতে। একটি গরান গাছের ডাল দিয়ে পুজো করা হয় কাঠামো। সেই ডাল প্রতিমার সঙ্গেই নিরঞ্জন হয়। কাঠামো পুজোর পর সেই লাঠি যায় কুমোরটুলিতে। সেখানেই  প্রতিমাশিল্পী তৈরি করেন মা দুর্গার মূর্তি।


পুজো পদ্ধতি- 
কুমোরটুলি থেকেই মা আসেন চট্টোপাধ্যায়দের বাড়িতে দেবীপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন দেবীকে বেনারসি শাড়ি ও বিভিন্ন প্রাচীন স্বর্ণালংকার পরানো হয়। এই বাড়িতে ষষ্ঠীর দিন রাত্রিবেলা হয় বেলবরণ উৎসব। সপ্তমীর দিন বাড়িতেই কলাবউ স্নান করানো হয়। অতীতে এই বাড়িতে বলিদান হত। সপ্তমী ও সন্ধিপূজায় একটি করে ও নবমীর দিন তিনটি পাঁঠাবলি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল একসময়। সেই প্রথা আজ বন্ধ। 


 

কনকাঞ্জলি প্রথা-
আর পাঁচটা বনেদি বাড়ির পুজোর মত রয়েছে কনকাঞ্জলি প্রথা। বাড়ির মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তিন বার মায়ের আঁচলে চাল ছুঁড়ে দিয়ে যায়। সারাজীবনের ঋণ চুকিয়ে ওই একই প্রথায় বিসর্জনের আগে প্রত্যেক বছর বিদায় নেন এই বাড়ির দুর্গাও।

ভোগবৃত্তান্ত- 
এই বাড়িতে ভোগ রান্না করেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। খিচুড়ি, নানান রকমের ভাজা, শুক্তনি, চিংড়িমাছের মালাইকারি, ভেটকিমাছের ঘণ্ট, লাউচিংড়ি, চাটনি, পায়েস, পানতুয়া ইত্যাদি নানান রকমের ভোগ রান্না করে দেবীকে নিবেদন করা হয়। এই বাড়িতে দুর্গাপুজোর দশমীর দিন হয় রান্নাপুজো, যাকে বলা হয় দুর্গা-অরন্ধন দিবস, অর্থাৎ আগের দিন সমস্ত রান্না করা হয়। দশমীর দিন ভোগ থাকে পান্তাভাত, ইলিশমাছের অম্বল, চাতলার চাটনি, কচুশাক ইত্যাদি। 

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের কীর্তন দল-
চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে একসময় একটি কীর্তনের দল ছিল। নাম, ‘রাধারমণ কীর্তন সমাজ’। যারা দেবীর উদ্দেশ্যে দশমীর দিন গান গেয়ে প্রার্থনা জানাতেন। সে রেওয়াজ আজও রয়ে গেছে। কীর্তন দল নেই কিন্তু দশমীর দিন পরিবারের সদস্যরা মিলে দুর্গার সামনে অতীতের ন্যায় প্রার্থনাসংগীত পরিবেশন করেন। আগে যাত্রার আসর বসত ঠাকুরদালানে। সে রেওয়াজও আজ আর নেই। 


আরও পড়ুন-
দুর্গাচরণ মিত্রর দফতরে কাজ করতে আসেন সাধক রামপ্রসাদ, বৈভব হারিয়ে মিত্র বাড়ির দুর্গাপুজোয় নিবেদিত নিখাদ ভক্তি
দেবীর বিসর্জনের পর গলায় বাজে স্বদেশী গান, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের দাদুর বাড়ি হাটখোলার দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজোর গল্প
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের নিলাম থেকে বুলবুলির লড়াই, ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ির দুর্গাপুজোর কাহিনীটি বড়ই অদ্ভুত!

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'মোদী বাংলার কৃষকদের একটা পয়সাও দেয় না' বিতর্কিত মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)
‘অনেকদিন পর কেষ্টদা ফিরেছে তাই একটু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে’ অদ্ভুত ব্যাখ্যা Satabdi-র! | Satabdi Roy News
‘এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে TMC টাকা তুলছে না’ Mamata-কে চরম তুলোধোনা Suvendu-র
হঠাৎ করে TMC নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে কেন? কী উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন অগ্নিমিত্রার | Agnimitra Paul
Naihati-তে কার পাল্লা ভারী? ফল ঘোষণার আগে উত্তেজনা তুঙ্গে গোটা এলাকায় | Naihati By Election Results