মুদি দোকান থেকে বীরভূমের শেষ কথা, দাপটের রাজনীতিতেই কি ভরসা রাখবেন অনুব্রত

  • অনুব্রত মণ্ডলের জীবন শুরু হয় মুদি দোকান থেকে
  • যুব কংগ্রেস করার সময়েই আলাপ মমতার সঙ্গে
  • দাপটের রাজনীতি করেই সাফল্য পেয়েছেন অনুব্রত
     

debamoy ghosh | Published : Jun 1, 2019 6:34 AM IST / Updated: Jun 01 2019, 12:06 PM IST

বীরভূমের শেষ কথা তিনি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী হবে, তা বলা মুশকিল হলেও এখনও বীরভূমে অনুব্রতর দাপট নিয়ে কারোরই বিশেষ সংশয় নেই। এ হেন অনুব্রতর জীবন অবশ্য শুরু হয়েছিল সাধারণ মুদি দোকান দিয়ে। 

বর্তমানে অনুব্রত থাকেন বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকার পনেরো নম্বর ওয়ার্ডে। যদিও তাঁর গ্রামের বাড়ি নানুরের হাটসেরান্দি গ্রামে। যে নানুরে আন্দোলন করার সময়ই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে পড়ে যান অনুব্রত। 

তিন ভাইয়ের মধ্যে অনব্রত মেজ। অষ্টম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনাও করেননি। এর পরে বাড়িতেই বাবার মুদি দোকান দেখাশোনা শুরু করেন তিনি। এর পাশাপাশি অনুব্রতদের একটি গ্রিলের কারখানাও ছিল। সেই কারখানারও দেখাশোনা করতে হত তাঁকে। 

রাজনীতিতে অনুব্রতর প্রবেশ কংগ্রেসের হাত ধরে। বরাবরই ডাকাবুকো স্বভাবের হওয়ায় সহজেই জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বের নজরে পড়ে যান তিনি। যুব কংগ্রেসের হয়ে কাজ করার সময়েই তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হয় অনুব্রতর। সেই সময় সংগঠনের কাজেই বীরভূমে আসতে হত মমতাকে। পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্ত সহায়ক গৌতম বসুর মাধ্যমে মমতার আরও আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন কেষ্ট। 

১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। কংগ্রেস ছেড়ে অনুব্রতও চলে আসেন তৃণমূলে। বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি হন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। আর অনুব্রত হন যুব তৃণমূলের সভাপতি। 

তবে দলের মধ্যে অনুব্রত মমতার বিশ্বাস অর্জন করে নেন নানুর কাণ্ডের সময়। ২০০১ সালে নানুরের সূঁচপুরে ১১ জন চাষিকে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। মুকুল রায়কে নিয়ে নানুরে যান মমতা। সেই সময়েই জেলায় সিপিএম বিরোধী জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলে মমতার আরও আস্থা অর্জন করে নেন অনুব্রত। 

এর পরে অনুব্রতকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ২০০৩ সালে তৃণমূল ছেড়ে দেন বীরভূমের জেলা সভাপতি সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জায়গায় অনুব্রতকে জেলার দায়িত্ব দেন মমতা। গত ষোল বছরে তৃণমূল জেলা সভাপতি হিসেবে গোটা বীরভূমে নিজের একছত্র দাপট তৈরি করেছেন অনুব্রত। বাম দুর্গ বীরভূমে প্রতিকূলতার মধ্যেও সংগঠন তৈরি করে ফেলেন অনুব্রত। একাধিকবার হেনস্থার শিকারও হতে হয় তাঁকে। প্রাণহানি হওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখিও হতে হয়েছে। তবু পিছু হটেননি কেষ্ট। আর ২০১১ সালে একসময়ের লাল দুর্গ বীরভূমকে সবুজ দুর্গে পরিণত করে ফেলেন দাপুটে এই তৃণমূল নেতা। নিজেই স্বীকার করেছেন, নেত্রী তাঁকে সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি বীরভূম নিয়েই ভাল আছেন। 

তবে নিজের এই দাপট ধরে রাখতে গিয়েই বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। কখনও ভরা জনসভায় পুলিশকে বোমা মারতে বলেছেন, কখনও চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজানোর নিদান দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে গুড় বাতাসা বা নকুলদানা খাওয়ানোর মতো নিদান দিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তবু অনুব্রত আছেন অনুব্রততেই।

স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে বোলপুরের বাড়িতে থাকেন অনুব্রত। স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনুব্রত কিন্তু তার মধ্যেও দলের কাজের সঙ্গে কোনওরকম আপস করেননি। বীরভূম থেকে নিয়মিত কলকাতায় এসে স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে ফের জেলায় ফিরে গিয়েছেন। এমন কী লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই মায়ের মৃত্যুর পরেও কোনওরকমে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সেরে দলের সভায় যোগ দিতে ছুটে গিয়েছেন।

তৃণমূল নিবেদিত প্রাণ কেষ্টর পাশে তাই বার বার দাঁড়িয়েছেন মমতা। রাজ্য-রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব বা নেত্রীর সুনজরে থাকা, সবদিক থেকেই তাবড় নেতাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন অনূব্রত। নেত্রীর মতোই এবার নিজের জেলাতেও অনুব্রতর বড় পরীক্ষা। লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমের দু'টি আসনেই তৃণমূল জিতলেও বেশ কয়েকটি বিধানসভায় বিজেপি-র কাছে পিছিয়ে পড়েছে দল। এমন কী, অনুব্রতর নিজের ওয়ার্ডেই পিছিয়ে তৃণমূল। জেলা সংগঠনেও ফাটল ধরাতে শুরু করেছে বিজেপি। ফলে অনুব্রত নিজেকে বদলান, নাকি দাপটের রাজনীতিতে ভরসা রেখেই বীরভূমের গড় ধরে রাখার লড়াইতে নামেন, সেটাই এখন দেখার। 

Share this article
click me!