কারোর লক্ষ্য খ্যাতি, কারোর প্রতিবাদ, কারোর বা অন্য কারণ - কিন্তু লোকসভা নির্বাচন ২০১৯-এ দারুণ উন্মাদনা বারানসী কেন্দ্র নিয়ে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন। কাজেই এখানে দাঁড়ালে সহজেই মিলবে স্পটলাইট। সেই আলোকবৃত্তকে ধরতেই নেমে পড়েছেন হাইকোর্টের দোষী সাব্যস্ত হওয়া বিচারক থেকে চাষী, বরখাস্ত হওয়া জওয়ান মায় নকল মোদী-ও।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সিএস কারনান। ভারতের প্রথম কর্মরত বিচারপি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আদালত অমাননার দায়ে ২০১৭ সালে ছয় মাসের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। এখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি। ২০১৮ সালে তামিলনাড়ুতে অ্যান্টি কোরাপশন ডায়নামিক পার্টি নামে এক রাজনৈতিক দল খোলেন তিনি। এই বছর সেই দলের হয়েই বারানসী থেকেই নির্বাচনে লড়ছেন তিনি।
আবার তামিলনাড়ুতে ফ্লুরাইড বিষক্রিয়ার শিকার হওয়া ১১১ জন কৃষক তাদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরতে বারানসী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে নয়া দিল্লিতে তাঁদের প্রতিবাদে ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছিল। এই গোষ্ঠীর নেতা পি আইয়াকান্নু জানিয়েছেন ১১১ জনই মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
এই ফ্লুরাইড বিষক্রিয়া নিয়ে সচেতনতার লক্ষেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আনসালা স্বামী। একই কারণে তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা ও অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাশম-এর ফ্লুরোসিস বিরোধী আন্দোলনের নেতা বড়ে শ্রীনিবাস ও জলাগম সুধীর-ও নির্বাচনে লড়ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রে সকলের চোখ থাকবে। তাকে তাঁদের আন্দোলনের কাজে লাগাতে চান।
অন্যরকম প্রতিবাদ তুলে ধরতে বারানসীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বরখাস্ত হওয়া বিএসএফ জওয়ান তেজ বাহাদুর যাদব। গত বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় জওয়ানদের খাওয়ারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। তদন্তে দেখা ।যায় তাঁর অভিযোগ সত্যি নয়। তারপরই বরখাস্ত করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তার পরেও তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। তিনি মেনে নিয়েছেন, তাঁর জয়ের সম্ভাবনা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি এই হাই প্রোফাইল কেন্দ্র থেকে লড়ছেন দেশবাসীর সামনে জওয়ানদের দুরাবস্থার চিত্রটা তুলে ধরার লক্ষ্যে।
এছাড়া গঙ্গা শোধন আন্দোলনে জড়িত বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বারানসীর সঙ্কটমোচন মন্দিরের মোহান্ত বিশ্বম্ভর নাথ মিশ্র-ও মোদীর বিরুদ্ধে লড়বেন বলে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় স্তরে খবর ছিল কংগ্রেস তাঁকে টিকিট দিতে পারে। কিন্তু, বর্তমানে বারানসী থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর লড়ার জল্পনায় সেই সম্ভাবনা পিছনে সারিতে চলে গিয়েছে।
এছাড়া বারানসীতে আরও এক প্রোফাইল প্রার্থী রয়েছেন। গত ৩০ মার্চ তারিখে ভীমসেনার নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ বারানসীতে এক রোড শো করে মোদীর হারের বিপদঘন্টি বেজে গেল বলে হুঙ্কার দিয়েছেন। জ্বালাময়ী ভাষণের জন্য দলিত যুব সমাজে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এঁদের পাশাপাশি বারানসীকে নিজের দ্বিতীয় নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন 'নকল মোদী' অভিনন্দন পাঠক। অবিকল নরেন্দ্র মোদীর মতো দেখতে এই ব্যক্তি নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রথমে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর আসন লখনউ-এ। ইতিমধ্য়েই তিনি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীকে দেখতে চান তিনি। আরও জানিয়েছেন 'জুমলা'-র বিরুদ্ধে লড়াই তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য।