যাঁর হাত ধরে তিনি তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছিলেন, সেই অর্জুন সিংহই এখন বিজেপি-র সাংসদ। তার উপরে তিনি আবার অর্জুন সিংহের শ্যালক। ফলে নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিংহের অবস্থান নিয়ে এখন ঘোর ধোঁয়াশা তৃণমূলে। তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা, বিজেপি-তেই যাচ্ছেন সুনীল। কিন্তু সুনীল নিজে দলের কর্মসূচিতে থাকছেন। দলের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। ফলে আগ বাড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নিতে পারছে না দল। বরং শুভ্রাংশুর মতোই সুনীলকে নিয়েও টানাপোড়েনে পড়েছে তৃণমূল।
সেই টানাপোড়েনের প্রমাণ এ দিন পাওয়া গেল মধ্যমগ্রামে তৃণমূলের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বৈঠকে। নোয়াপাড়ার বিধায়ক হিসেবে বৈঠকে হাজির ছিলেন সুনীল সিংহ। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক তাপস রায়ের মতো নেতারা। কিন্তু সূত্রের খবর, সুনীলের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্ত নেতারা কার্যত তাঁর সামনে কিছু আলোচনাই করেননি। জানা গিয়েছে, নোয়াপাড়া বিধানসভার সাংগঠনিক দায়িত্ব হাতে নিতে চান সুনীল। কিন্তু সেই আশ্বাস তাঁকে দেওয়া হয়নি। এর পর বৈঠকের মাঝপথেই বেরিয়ে যান সুনীল। যাওয়ার সময় অবশ্য তিনি দাবি করেন, গাড়ুলিয়া পুরসভার বৈঠক থাকায় তিনি চলে যাচ্ছেন। নোয়াপাড়ার বিধায়ক ছাড়াও গাড়ুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যানও সুনীল। দল ঘুরে দাঁড়াবে বলেও দাবি করেন সুনীল। ফের তৃণমূল ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসবে বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু তিনি বিজেপি-তে যাচ্ছেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, "দলের উপরে আমার আস্থা আছে, সবথেকে বেশি আস্থা আছে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে। কিন্তু মানুষের মতামতকে আমার মেনে নিতে হবে। আমি দলে আছি, দলেই থাকব।" দিল্লিতে গিয়ে তৃণমূল বিধায়ক কাউন্সিলরদের বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে তিনি বলেন, "কে দিল্লি গিয়েছে, কে যায়নি আমি জানিনা। আমি আপনাদের সামনেই আছি। আগে দেখুন কী হয়।"
বৈঠকের শেষে অবশ্য সুনীলের দাবি মতো তাঁকে নোয়াপাড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ওই বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে। এ দিনের বৈঠকেই জেলায় তৃণমূলের হেরে যাওয়া দুই কেন্দ্র ব্যারাকপুর এবং বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দু'টি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটিতে বিধায়ক নির্মল ঘোষ, বিধায়ক তাপস রায়, মদন মিত্র, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, মন্ত্রী ব্রাত্য বসুদের রাখা হলেও জায়গা হয়নি সুনীলের। আপাতত সুনীলকে নিয়ে ধীরে চলো নীতিই নিয়েছে দল। একইভাবে নজর রাখা হচ্ছে বিধায়ক এবং বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের উপরেও।