এই বছর দোল পূর্ণিমা বাংলার ২৫ ফাল্গুন ১৪২৬, ইংরেজির ৯ মার্চ ২০২০ সোমবার পালিত হবে। দোল পূর্ণিমা তিথির শুরু রবিবার রাত্রি ২টো ৩ মিনিটে, পূর্ণিমা উপবাস পালন। দোল পূর্ণিমা তিথি শেষ বাংলার ২৬ ফাল্গুন ১৪২৬, ইংরেজির ১০ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার। উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়।
ইতিমধ্যেই হোলি উৎসবে মেতে উঠেছে বৃন্দাবন। পুরও ব্রজভূমিতে মহিমা সহ বিভিন্ন উপায়ে পালিত হয় হোলি। এই পূণ্যভূমি বৃন্দাবনেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব কেটেছে। তাই এইখানে হোলি উপলক্ষে প্রচুর ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হন। বৃন্দাবন হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরা জেলার অন্তর্গত একটি শহর।
শহরটি ঈশ্বর পরম রাধামাধবের ভূ লোকের লীলা ভূমি জেলাসদর মথুরা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে আগ্রা-দিল্লি হাইওয়ের ২ নং জাতীয় সড়কের উপর অবস্থিত। বৃন্দাবন শহরে রাধা ও কৃষ্ণের অনেকগুলি মন্দির আছে। হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান।
বৃন্দাবনে প্রচুর মন্দির রয়েছে যেখানে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে হোলি উৎসব পালন করা হয় তবে প্রেম মন্দিরের হোলি বিশেষ গুরুতবপূর্ণ।
এই শহর হিন্দু ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত এবং হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এই শহরের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির একটি হল গোবিন্দদেব মন্দির। এটি ১৫৯০ সালে নির্মিত হয়। সেই শতাব্দীরই গোড়ার দিকে বৃন্দাবন একটি শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। বৃন্দাবনের আদি অবস্থান কোথায় ছিল, তা ১৬শ শতাব্দীর আগে মানুষ ভুলে গিয়েছিল। চৈতন্য মহাপ্রভু এই স্থান পুনরাবিষ্কার করেন।
১৫১৫ সালে কৃষ্ণের বাল্যলীলার স্থানগুলি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে চৈতন্য মহাপ্রভু বৃন্দাবনে এসেছিলেন। কথিত আছে, তিনি দিব্য প্রেমের আধ্যাত্মিক ভাবে আচ্ছন্ন হয়ে বিভিন্ন পবিত্র বনে পরিভ্রমণ করেছিলেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, তিনি তাঁর দৈব আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে বৃন্দাবন ও তার চারপাশে যে সকল স্থানে কৃষ্ণ তাঁর বাল্যলীলা করেছিলেন বলে মনে করা হয়, সেগুলি আবিষ্কার করেন।
দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণব ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বহির্বঙ্গে পালিত হোলি উৎসবটির সঙ্গে দোলযাত্রা উৎসবটি সম্পর্কযুক্ত। এই উৎসবের অপর নাম বসন্তোৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও রং নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়।
বিগত ২৫০ বছরে বৃন্দাবনের অধিকাংশ বনই নগরায়ণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই নগরায়ণ প্রথম শুরু করেন স্থানীয় রাজারা। পরবর্তীকালে সেই কাজ চালিয়ে নিয়ে যান গৃহনির্মাতা সংস্থাগুলি। শুধুমাত্র কয়েকটি স্থান ছাড়া বাকি অঞ্চলের বনাঞ্চল স্থানীয় ময়ূর, গরু, বাঁদর ও বিভিন্ন ধরনের পাখি সহ বিলুপ্ত হয়। শহরে এখন অল্প ময়ূরই দেখা যায়। তবে বাঁদর ও গরু শহরের সর্বত্রই দেখা যায়।
প্রেম মন্দিরের মূল কাঠামোটি মার্বেল পাথরের তৈরি। কৃপালু জি মহারাজ ২০০১ সালেই এই মন্দিরটি নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন। এটি প্রায় ১০০০ শ্রমিক দ্বারা ১১ বছর পরে ২০১২ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। ৫৪ একর জায়গার উপর নির্মিত এই প্রেমের মন্দিরটি ১২৫ ফুট উঁচু, ১২২ ফুট লম্বা এবং ১১৫ ফুট প্রশস্ত। এই তীর্থযাত্রা নিজেই তুলনাহীন শিল্পের নমুনা।
মন্দিরে হোলি উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষে, রাধা-কৃষ্ণের ফুল এবং রঙগুলির সঙ্গে একটি বিশেষ প্রাকৃতিক মেল বন্ধন রয়েছে। এর পরে, ফুল এবং প্রাকৃতিক রঙগুলি বর্ষণ করা হয়। বিদেশের লোকেরা এখানে এই হোলি উদযাপনে অংশ নিতে আসে।
মন্দিরে উদ্যানের মধ্যে শ্রী গোবর্ধন লীলা, কালিয়া নাগ দামান লীলা, ঝুলন লীলা এবং রাধা-কৃষ্ণের সুন্দর ঝিলিক সাজানো আছে। মন্দিরে মোট ৯৪ টি স্তম্ভ রয়েছে যা রাধা-কৃষ্ণের বিভিন্ন সময় সহ সজ্জিত রয়েছে। বেশিরভাগ স্তম্ভে গোপীদের ভাস্কর্যগুলি খোদাই করা আছে। যা এই মন্দিরের সৌন্দর্য কয়েকগুন বাড়িয়ে তুলেছে।