করোনা আতঙ্কে সারা দেশ জুড়ে ‘শিরে সংক্রান্তি’, ঘরবন্দিতেই পালন করুন বর্ষশেষের রীতি
এবারে বাড়ি থেকেই হবে বর্ষবরণ, করোনা আক্রান্তের জেরে কার্যত ঘরবন্দি গোটা দেশ। এর মধ্যেই আজই শেষ দিন এই বছরের। আগামী কাল সূচণা এক নতুন বছরের। ১৪২৬ সালকে বিদায় জানিয়ে এক নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া। অন্য বছরগুলির তুলনায় এই বছর যে একেবারেই আলাদা রূপে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তা আর বলার বাকি রাখে না। তবুও বর্ষবরণ বলে কথা তা যে ভাবেই হোক উৎসব প্রিয় বাঙালি কি এই দিনটি ভুলতে পারে।
deblina dey | Published : Apr 13, 2020 7:43 AM IST
অন্যান্য বছরগুলির মতো না হলেও কোনও মতেই আচার আচরণ বাড়ি থেকেই পালন করছেন চৈত্র সংক্রান্তিতে। চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী এই দুটি দিনে এপার ও ওপার বাংলা মুখরিত হয়ে ওঠে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তবে এবারে তার রূপ বদল হলেও ভার্চুয়ালি পালিত হবে দুই বাংলাতেই নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠান।
পশ্চিমবঙ্গে চৈত্রসংক্রান্তিতে হুগলি জেলার তারকেশ্বরে তারকনাথ শিব, পূর্ব বর্ধমান জেলার কুড়মুনের ঈশানেশ্বর শিব, বাঁকুড়া জেলার এক্তেশ্বর শিব ও বাংলাদেশে ফরিদপুরের কোটালিপাড়ার বুনোঠাকুর শিবের গাজন মেলার আয়োজন করা হয়। কলকাতার গাজন উৎসবে এককালে কাঁসারিপাড়া ও জেলেপাড়ার সঙ বিখ্যাত ছিল। বাঁকুড়ার ছাতনা থানার ঝাঁটিপাহাড়ী গ্রামের গাজন বিখ্যাত। এখানকার মেলায় আদিবাসী নৃত্য হল বিশেষ আকর্ষণ।
পূরাণে কথিত আছেচৈত্র সংক্রান্তির দিনে শিব-উপাসক বাণরাজা দ্বারকাধীশ কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মহাদেবের প্রীতি উৎপাদন করে অমরত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষায় ভক্তিসূচক নৃত্যগীতাদি ও নিজ গাত্ররক্ত দ্বারা শিবকে তুষ্ট করে অভীষ্ট সিদ্ধ করেন। সেই স্মৃতিতে শৈব সম্প্রদায় এই দিনে শিবপ্রীতির জন্য উৎসব করে থাকেন।
চৈত্র সংক্রান্তিতে শুধু গাজন আর চড়ক নয় চলে দেশজুড়ে বর্ষবরণের আনন্দে চলে নানান ধরণের মেলা ও উৎসব। ব্যবসায়ীদের জন্য এই দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা সংক্রান্ত সারা বছরের হিসেব নিকেশের জন্য খাতার হিসেব, হালখাতার জন্য ব্যবসায়িক স্থান সাজানো নিয়ে অন্যান্য বছর ব্যস্ততা লেগেই থাকতো। তবে এই বছরের চেহাড়াটা সম্পূর্ণ আলাদা।
চড়ক গাজন ছাড়াও সংক্রান্তিতে আরও একটি উৎসব পালিত হল বাংলায় যা হল বিজু উৎসব। বিজু হল চাকমা আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান আনন্দ-উৎসব। বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়।
এই দিন ভোরের হওয়ার আগেই ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে পড়ে ফুল সংগ্রহের জন্য। সংগ্রহিত ফুলের একভাগ দিয়ে পুজো করা হয় আর অন্যভাগ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বাকি ফুলগুলো দিয়ে ঘরবাড়ি সাজানো হয়।
চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাত্ ১৩ এপ্রিল পালন করা হয় মুলবিজু। এইদিন সকালে বুদ্ধমূর্তি স্নান করিয়ে পুজো করা হয়। এদিনে ঘরে নানান মিষ্টি সহ অনেক ধরনের সুস্বাদু খাবার রান্না করা হয়। বন্ধুবান্ধব আত্নীয়স্বজন বেড়াতে আসে ঘরে ঘরে এবং এসব খাবার দিয়ে তাদেরকে আপ্যায়ন করা হয়। সারাদিন রাত ধরে চলে ঘুরাঘুরি। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেও চলে বিজুর আমেজ থাকে।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এবারের সমস্ত উৎসব পালনই বন্ধ। তাই বাড়িতে থেকেই উৎসবের যাবতীয় রীতিনীতি পালন করুন। বাড়িতে থেকেই আজ বিদায় জানান ১৪২৬ কে আর বরণ করে নিন ১৪২৭ সাল। রবিঠাকুরের গানে গানে ভালো কাটুক চৈত্র সংক্রান্তি। আর নতুন বছরের সঙ্গে অপেক্ষা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার।