৬২ শতাংশ করোনা রোগীই বিশ্বের ৫টি উন্নত দেশের, এখনও অনেকটাই নিরাপদে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া
বিশ্বে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় পৌঁছে গেছে ১৪ লক্ষে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর মাত্র ৫টি দেশেই রয়েছে মোট আক্রান্তের ৬২ শতাংশ। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে এগিয়েছে রয়েছে আমেরিকা। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষের কাছাকাছি। এর পরেই রয়েছে স্পেন, ইতালি, এবং জার্মানি। প্রতিটি দেশেই আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। অন্যদিকে ফ্রান্সেও কোভিড ১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পৌঁছে গেছে এক লক্ষের দোড়গোড়ায়। তবে দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের কয়েকটি জায়াগায় করোনার প্রকোপ দেখা গেলেও তা উদ্বেগজনক নয়। আর আফ্রিকায় ভাইরাসটি তেমন সুবিধা করতে পারছে না। দক্ষিণ এশিয়াতেও এর অবস্থান বেশ দুর্বল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের মাত্র ১০ দেশে ৮১ ভাগ করোনা রোগী রয়েছেন।
ভারতে নিজামুদ্দিন মার্কেজে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। এই অঞ্চলে বিশ্বের মোট করোনা আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন ০.৪৩ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীন থেকে ইউরোপ ঘুরে ভাইরাসটি দক্ষিণ এশিয়ায় এসেছে। এর মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে করোনা দুর্বল হয়েছে। এই অঞ্চলের আবহাওয়াও কাজ করেছে করোনার প্রতিকূলে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষণা বলছে, আক্রান্ত দেশগুলোর গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৪ থেকে ৯ গ্রাম। সেক্ষেত্রে এশিয়ার যে দেশগুলোতে আলাদা করে বর্ষা ঋতু রয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। কারণ এই অঞ্চলে প্রতি ঘনমিটারে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০ গ্রাম পর্যন্ত।
আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পরে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, ২৯ জানুয়ারি ইতালি, ৩০ জানুয়ারি স্পেন, ২৬ জানুয়ারি জার্মানি ও ২৩ জানুয়ারি ফ্রান্সে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে দেশগুলোয় করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চে।
ওই একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়াতেও আঘাত হানে করোনা। ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে নেপাল। ২৬ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয় শ্রীলঙ্কায়। ২৯ জানুয়ারি ভারত, ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান, ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান, ৫ মার্চ ভুটান, ৬ মার্চ মালদ্বীপ ও সর্বশেষ ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
করোনা শনাক্তের শুরুতেই লকডাউন ঘোষণা করে নেপাল ও ভুটান। এর ফল পেয়েছে দেশ দুটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু' বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ও ভুটানে স্থানীয়ভাবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। দুই দেশের আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিদেশফেরত। লকডাউন ঘোষণা করে অনেকটা প্রতিরোধ করেছে মালদ্বীপ।
ভারতের বিখ্যাত চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি জানিয়েছেন , ইতালিতে ছড়ানো ভাইরাসের সঙ্গে ভারতে ছড়ানো ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। ভারতের ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানব শরীরের কোষে সংক্রামিত হয়। ভারতের আবহাোয়া এটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাবে, এ পর্যন্ত বিশ্বের ২০০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগীর ৮১ শতাংশ মাত্র ১০টি দেশের। এর মধ্যে ৬টি দেশ ইউরোপের এবং ৩টি এশিয়ার। তবে শীর্ষে রয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বে ৫৩ শতাংশ করোনা রোগীই ইউরোপের। ইউরোপের পর সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী রয়েছে উত্তর আমেরিকায়। এমআইটির গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের দিকের রাজ্যগুলোর তাপমাত্রা কম এবং সেখানে সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত উষ্ণ দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশি।
আফ্রিকা মহাদেশের ৪৬টি দেশে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই অঞ্চলে তেমন পাত্তা পাচ্ছে না করোনা। বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত রোগীর মাত্র ১ শতাংশ আছে আফ্রিকা মহাদেশে। মোট করোনা রোগীর ২ শতাংশ আছে দক্ষিণ আমেরিকায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড নাবারো ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন , ‘দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশ মানলেও উন্নত দেশগুলো মানে না।’সেই কারণে বিশ্বের আধুনিক ও উন্নত দেশগুলিও আজ সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণের শিকার।