ডান্স অব ডেমোক্র্যাসি - ১৬টি লোকসভা নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৯৪৭ সালে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন খেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল ভারত। ১৯৫১-৫২ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কংগ্রেসের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু। সেই প্রথম নির্বাচনের পর থেকে আরও ১৫টি লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে। এই নির্বাচনী ইতিহাসেই নিহিত রয়েছে ভারতীয় গণতন্ত্রের ওঠাপড়া, ভাঙাগড়ার কাহিনি।
amartya lahiri | Published : Apr 28, 2019 11:49 AM IST / Updated: Apr 28 2019, 05:22 PM IST
প্রথম নির্বাচনে বোম্বে উত্তর-মধ্য কেন্দ্র থেকে লড়ে পরাজিত হন স্বাধীন ভারতের প্রখম আইনমন্ত্রী তথা সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকর।
এই নির্বাচনে লোকসভা ভোটের ইতিহাসে প্রথম বুথ দখলের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। ঘটনাটি ঘটেছিল বিহারের বেগুসরাইয়ের মাতিহানি-তে।
১৯৬৪ সালে জওহরলালের মৃত্যু ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। কিন্তু ১৯৬৬-তে তাঁরও মৃত্যু হয়। এরপর বাকি সময় প্রধানমন্ত্রিত্ব সামলালেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
এই লোকসভা ভোটেই প্রথমবার অংশ নিয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য। তার আগে অবধি ভারতের পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরেও পৃথক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হত। ইন্দিরা গান্ধীও এই প্রথমবার নির্বাচনে নেতৃত্ব দেন।
প্রথমবার ভারতে অন্তর্বর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কংগ্রেস (রিকুইজিশনিস্ট) দল গড়ে সরকার ভেঙে দিয়ে নির্বাচন লড়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। জাতীয় কংগ্রেস তখন মোরারজি দেশাই-এর নেতৃত্বে, কংগ্রেস (অর্গানাইজেশনাল) বা আদি কংগ্রেস নামে পরিচিত ছিল।
এই লোকসভা ভোটে স্বাদীনতার পর প্রথমবার ভারতের শাসন ক্ষমতা হারায় কংগ্রেস। ভারতীয় জনসংঘ, লোকদল, স্বতন্ত্র দলের মতো বেশ কয়েকটি বিরোধী দল এক সঙ্গে জনতা পার্টি জোট গড়েছিল। জোটের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই, পরে চৌধুরি চরণ সিং। ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থার প্রেক্ষিতেই ভরাডুবি হয় জাতীয় কংগ্রেসের। এমনকী রায়বেরিলিতে ইন্দিরা গান্ধী পরাজিত হন ৫৫ হাজারেরও বেশি ভোটে। আমেঠিতে হেরে যান তাঁর পুত্র তথা তখনকার দাপুটে কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধীও।
জনতা পার্টি জোট সরকার গড়লেও বিভিন্ন দলের মত পার্থক্যে তিন ছর যেতে না যেতেই সেই সরকার ভেঙে যায়। এই ভোটে প্রথমবার হাত চিহ্ন নিয়ে নির্বাচনে লড়ার অধিকার পেয়েছিল কংগ্রেস। এর আগে পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী প্রতীক ছিল জোড়া বলদ।
ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর সহানুভূতির হাওয়ায় রেকর্ড আসন পায় কংগ্রেস। প্রথমবার কোনও আঞ্চলিক দল হিসেবে লোকসভায় প্রধান বিরোধী দল হয় টিডিপি।
ভোটদানের ন্যুনতম বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ করা হয়। জনতা দলের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ফ্রন্ট সরকার গড়ে। প্রধানমন্ত্রী হন ভিপি সিং। রাম মন্দির ইস্যুতে জোট ভেঙে গেলে চন্দ্র শেখর জনতা দল থেকে বেরিয়ে এসে কংগ্রেসের সমর্থনে মাত্র ৬৪ সাংসদ নিয়ে সরকার গড়েছিলেন, যা টিকেছিল কয়েক মাস।
একাদশ লোকসভাতেও ফল হয় ত্রিশঙ্কু। প্রথমে সরকার গড়েও ১২ দিনের মাথায় সংসদে সংখ্যাগরীষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেন বাজপেয়ী পরে কংগ্রেস সমর্থনে অকংগ্রেসী ও অবিজেপি দলগুলির জোটের প্রধানমন্ত্রী হন এইচ ডি দেবগৌড়া, পরে আই কে গুজরাল।
এই বারেও একক সংখ্যা গরীষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ভোটপরবর্তী এনডিএ জোট গড়ে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫৪টি। ২৭৩ ম্যাজিক সংখ্যা না হলেও বাজপেয়ীকে সরকার গড়তে ডেকেছিলেন রাষ্ট্রপতি আর কে নারায়ণন।
জয়ললিতার এআইএডিএমকে এনডিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে সরকার ভেঙে যায়। ভোটের পর টিডিপি, এনডিএ-কে সমর্থন করলে তাদের মোট আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৩। এই ভোটে ৭৩ শতাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট পেয়েছিল ২১৫টি আসন। তাদের ৫৯ জন সাংসদ নিয়ে বাইরে থেকে সমর্থন দেয় বামফ্রন্ট।
এই নির্বাচনের ঠিক আগে ইন্দো-মার্কিন পরমাণু চুক্তিকে ঘিরে মত-বিরোধ থেকে বামপন্থীরা ইউপিএ জোট থেকে বেরিয়ে যায়। তারপরেও নির্বাচনে জিতে জওহরলাল নেহরুর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পাঁচ বছরের পুরো সময় পূর্ণ করার পর দ্বিতীয় বার পুনর্নির্বাচিত হন।প্রধা
নরেন্দ্র মোদীর প্রতি মানুষের বিপুল সমর্থনের হাওয়ায় ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফল হয় কংগ্রেসের। প্রধান বিরোধী দল হওয়ার প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ আসনও জোটেনি তাদের।