বিজেপির হাত ধরে বঙ্গে মাথা তুলছে নিম্নবর্ণের হিন্দুত্ব, বাংলা কি শিখবে রাজনীতির নতুন ভাষা

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকেই ভারতে পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতির সূচনা হয়েছিল। নব্য উদার অর্থনীতির ভারতে, জাত-বর্ণের পরিচয় ঘিরে রাজনীতি, হিন্দুত্বের পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ ঘটেছিল। তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল মোটামুটিভাবে হিন্দি বলয়েই। অন্তত, বাংলায় এতদিন পর্যন্ত রাজনীতির এই পথে ছিল না। তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে, দেখা যাচ্ছে বদলে গিয়েছে বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বড়-সড় রূপান্তর দেখা যাচ্ছে বাংলার রাজনৈতিক ভাষার। আর বঙ্গ রাজনীতির এই নতুন ভাষাকেই নির্বাচনী জয়রথের চাকায় পরিণত করেছে বিজেপি।

Asianet News Bangla | Published : Mar 22, 2021 11:18 AM IST

16
বিজেপির হাত ধরে বঙ্গে মাথা তুলছে নিম্নবর্ণের হিন্দুত্ব, বাংলা কি শিখবে রাজনীতির নতুন ভাষা

বাংলায় জাতিভেদ, বর্ণভেদ আগে ছিল না, তা নয়। ভেদাভেদের রাজনীতিতে না গিয়ে, পিছিয়ে পড়া জাতি-উপজাতিদদের শ্রেণী হিসাবে দেখত বামেরা। পাড়া বা ক্লাব কমিটি গড়ে, সেই কমিটিতে সকল জাত-বর্ণ-ধর্মের প্রতিনিধিত্ব রাখা হত। অনেক ক্ষেত্রে সেই কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ছিল। তাই ভেদাভেদ থাকলেও, রাজনৈতিক ঐক্যে এক হয়ে ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়। তবে, তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে, যাবতীয় সরকারি সুবিধা এমনভাবে স্থানীয় নেতারা কুক্ষিগত করে রেখেছেন, তাতে ক্ষোভ বেড়েছে সকল সম্প্রদায়ের। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলার পিছিয়ে পড়া জাতি-উপজাতি সম্প্দায়ের নতুন শিক্ষিত প্রজন্মের উচ্চাকাঙ্খা।

26

আর সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের মতো তফসিলি জাতি-উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেনীর পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতি। আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা চাইছেন, ক্ষমতায় উচ্চ বর্ণের আধিপত্য সরিয়ে ওবিসি-দলিত আধিপত্য কায়েম করা। আর এই কারণেই বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষকে, তাঁদের নেতা হিসাবে মনে করছেন এই এসসি-এসটি, দলিত, ওবিসি অংশ। আর হিন্দি বলয়ের রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে বিজেপি এই বিষয়ে তাদের নির্বাচনী ভাষ্য তৈরি করছে। দলিত-ওবিসি আবেগের সঙ্গে হিন্দুত্ব ও বাঙালি পরিচয়ের মিশেলে তৈরি করা হচ্ছে বিপজ্জনক ককটেল।

36

তবে, উত্তর প্রদেশ-বিহারের পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে বাংলার নয়া পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতির অনেকটাই তফাত রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে কাশীরাম-মায়াবতী বা চন্দ্রশেখর আজাদের নেতৃত্বে দলিত-বহুজন রাজনীতির উত্থান ঘটেছিল। পরে বিজেপি সেই দলিত- পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরিয়েছে। বাংলায় কিন্তু, শুরুটাই করেছে বিজেপি। তাই, বাংলার ওবিসি-দলিত রাজনীতি, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

46

শুধু তাই নয়, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে অনগ্রসর হিন্দু বর্ণের মধ্যে বিজেপি প্রভাব তৈরি করতে পারলেও, হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলিতে নেতৃত্ব কিন্তু ঘোরাফেরা করে উচ্চবর্ণের হিন্দু নেতাদের হাতেই। বিজেপি পরিচিত মূলতঃ উচ্চবর্ণের দল হিসাবেই পরিচিত। বাংলায় অবশ্য আরএসএস-বিজেপি মিলে বহু বছর ধরেই বাংলার ওবিসি-দলিত ও তফসিলি উপজাতি, জনজাতি  সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাব বৃদ্ধির কাজ চালিয়ে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষের মতো ওবিসি নেতারাই বঙ্গ বিজেপির মুখ। তাই বাংলার ওবিসি-দলিতদের কাছে বিজেপিকে 'উচ্চ বর্ণের দল'এর পরিচয় ঝেড়ে ফেলেছে। আর এইসব প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলিকে হিন্দুত্বের রাজনীতিতে পা দেওয়া থেকে বাধা দেওয়ার মতো আম্বেদকরপন্থী দলিত-বহুজন অংশ বাংলায় নেই বললেই চলে।

56

বাংলায় বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন কোন পথে চলবে, তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। তবে এখন অন্তত এই সামাজিক সম্প্রদায়গুলিই বাংলায় তাদের দৃঢ় রাজনৈতিক ভিত্তি। তাই এই মুহূর্তে অন্তত এই রাজ্যে উচ্চ-বর্ণ কেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে রাজনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠছে এই অনগ্রসর জাতি-উপজাতিগুলিই। আর এটাই এই মুহূর্তে এই সম্প্রদায়ের মানুষের মূল চাহিদা।

66

বাংলায় তফসিলি জাতির জনসংখ্যা, মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ। ওবিসির সংখ্যা ১৭ শতাংশ, আর জনজাতি জনসংখ্যা প্রায় ৫.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, এই রাজ্যে এই পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় একটি বিরাট ভোট ব্যাঙ্ক। কাজেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এই বিরাট পরিবর্তন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানের প্রধান কারণ।

 

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos