মোবাইলে বুঁদ বর্তমান প্রজন্ম, ধুঁকতে বসেছে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী টুসু উৎসব

টুসু গান রেওয়াজ না করে মোবাইলে ব্যস্ত বর্তমান প্রজন্ম। আর সেই মোবাইলের জন্যই ভাটা পড়েছে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী লোক সংস্কৃতি টুসু পরবে। বিক্রি একেবারেই নেই টুসুর সাঁজোয়া ঘর চৌডলের। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সমস্যায় পড়েছেন পুরুলিয়ার চৌডল শিল্পীরা।

Maitreyi Mukherjee | Published : Jan 13, 2022 5:36 AM IST
110
মোবাইলে বুঁদ বর্তমান প্রজন্ম, ধুঁকতে বসেছে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী টুসু উৎসব

পৌষ সংক্রান্তি মানেই পুরুলিয়ার অন্যতম বড় লোক সংস্কৃতি টুসু পরব। দুর্গাপুজোর পর পুরুলিয়ার বড় উৎসব টুসু। দুর্গাপুজোর মতোই পৌষ সংক্রান্তি তথা টুসু পরবে নতুন জামা কাপড় কেনা কাটা করে থাকেন পুরুলিয়ার বাসিন্দারা। দু'দিন ব্যাপী জেলা জুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। এই সময় ছুটি থাকে স্কুল-কলেজ। 

210

টুসুর কোনও মূর্তি হয় না। ছোট্ট মাটির ডিপির মতো তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন শস্য দিয়ে তৈরি করা হয় টুসু। টুসু কৃষির কাল্পনিক দেবী হিসেবে পূজিত হন। পৌষ মাসের প্ৰথম দিন থেকে এক মাস ব্যাপী সন্ধে বেলা চলে টুসুর গান। পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির দিন বাড়ির মেয়ে-বউরা সুদৃশ্য চৌডলে সাজিয়ে টুসু গান গেয়ে বিভিন্ন নদী এবং জলাশয়ে টুসুকে বিসর্জন দেন। ওইদিনই সম্পন্ন হয় পুরুলিয়ার টুসু পরব। বিভিন্ন জায়গায় বসে মেলাও।

310

কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে টুসু পরবে ভাটা পড়েছে। রাঙামাটি পুরুলিয়ার টুসু পরবে দু'বছর ধরে তেমন জৌলুস লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একদিকে করোনা আর অন্যদিকে মোবাইল ফোনের প্রতি অত্যাধিক আসক্তি। এই দুইয়ের দাপটেই এখন ধুঁকতে বসেছে টুসু পরব। 

410

টুসুর গান বা টুসুর চৌডল নিয়ে দিনের পর দিন কমছে উৎসাহ। কারণ সেই সব ছেড়ে বর্তমান প্রজন্ম মেতে উঠেছে মোবাইল ফোনে। টুসুর দিকে এখন তেমনভাবে আর কারও খুব একটা গুরুত্ব নেই। ফলে কমে গিয়েছে এই পরবের জৌলুসও। 

510

টুসুর তৈরি ঘরকে বলা হয় চৌডল। রং বেরঙের কাগজ এবং টুকরো টুকরো বাঁশ কাঠি দিয়ে তৈরি করা হয় চৌডল। ছোট, বড়, মাঝারি থেকে বৃহদাকার চৌডল তৈরি করা হয়। চৌডল দেখতে ঠিক যেন সুদৃশ্য ভাবে সাজানো মন্দির। বিভিন্ন আকারের এই চৌডলে সাজিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় টুসুকে। 

610

এক একটি চৌডলের দাম ৫০ থেকে হয় ১০০০টাকা পর্যন্ত হয়। সেই চৌডলের দাম এবার তেমন এখটা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ তার চাহিদাই তেমন একটা নেই। বিক্রি একবারে লাটে উঠেছে। প্রায় পনেরো দিন আগে থেকে নিখুঁত ভাবে চৌডল তৈরি করে বিক্রি না হওয়ায় সমস্যায় পুরুলিয়ার প্রান্তিক ব্লক ঝালদার খাটজুড়ি গ্রামের চৌডল শিল্পীরা। 

710

পুরুলিয়া থেকে কাশিপুর বলরামপুর এবং ঝালদার বিভিন্ন হাটে বাজারে চৌডলের পসরা সাজিয়ে বসছেন চৌডল শিল্পীরা। শিল্পী প্রেমলাল কুইরি, ঘলটু কুইরিরা জানান, একদিকে কোভিড এবং বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তারা আর টুসু, টুসুর গান বা চৌডল খুব একটা পছন্দ করছে না। তাই এই আধুনিক যুগে টুসুর চৌডল বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছে। এর উপর বাধ সেজেছে পৌষ মাসের অকাল বর্ষণ। সব মিলিয়ে নাজেহাল দশা শিল্পীদের।

810

এক শিল্পী বলেন, "আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও যতগুলো চৌডল বাজারে আনতাম সব বিক্রি হয়ে যেত। এখন কম পরিমাণ তৈরি করেও বিক্রি হচ্ছে না। দামও ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক। না হলে আমাদের আরও সমস্যায় পড়তে হবে।"

910

ঝালদা শহরের বৃদ্ধা মিরারানী সূত্রধর জানান, "একটা সময় ছিল যখন হাটের দিনে দুয়ারে বসে থাকতাম। শুধুমাত্র সার দিয়ে চৌডল নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। কিন্তু এখন আর সেরকম নজরে পড়ে না। ধীরে ধীরে মনে হয় পুরুলিয়ার টুসু হারিয়ে যাচ্ছে।" 

1010

প্রযুক্তি নির্ভর যুগে এখন পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী টুসু এখন অনেকটাই ফিকে। ধীরে ধীরে এই পরব একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

Share this Photo Gallery
click me!

Latest Videos