একে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে ওষ্ঠাগত বিশ্ববাসী। আর এর মধ্যেই আগত দিনে সমূহ বিপদের আশঙ্কার খবর শোনাল নাসা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীকে ঘিরে থাকে যে চৌম্বকীয় স্তর, সেটাই একন বিপদের মুখে।
পৃথীবিকে ঘিরে থাকা এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডই সৌর রশ্মীর দাবদাহ থেকে পৃথিবীর প্রণিকূলকে অনেকাংশে রক্ষা করে। এমনকী একাধিক গবেষণার জন্য এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর পৃথিবীর বায়ুস্তরে পরিবর্তনও অনেকাংশে নির্ভরশীল। বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ আটলান্টিক সাগরের নামে এই বিষয়টির নামকরণ করা হয়েছে বলে নাসা সূত্রে খবর। সাউথ আতলান্তিক অ্যানোমলি বা এসএসএ নামের ভৌগলিক এই স্তর বিশালভাবে ফাটলের কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। সেই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ফাটল আরও বড় হয়ে গিয়েছে। একটা ফাটল ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে। ফলে, ওই এলাকায় পার্থিব সভ্যতাকে ভয়ঙ্কর সৌরকণা, সৌর বিকিরণ ও মহাজাগতিক রশ্মির ছোবল সামলাতে হবে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সাম্প্রতিক রিপোর্টে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর ফলে, সমূহ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ওই এলাকা দিয়ে প্রদক্ষিণরত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহগুলির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের। ব্যাহত হতে পারে ওই এলাকার টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ ও নেভিগেশন ব্যবস্থাও।
নাসা এও জানাচ্ছে, দক্ষিণ আটলান্টিক অ্যানোমালির উপর সর্বদা নজর রাখছেন নাসার ভূবিজ্ঞানীরাও। যেভাবে এটি ক্রমশ শক্তিক্ষয় করছেন এই আস্তরণ, তা চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজ্ঞানীদের। পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি মহাকাশে কয়েক লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। এর অন্য নাম ‘জিওম্যাগনেটিক ফিল্ড'। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটিই ভয়ঙ্কর সৌর বিকিরণের পাশাপাশি অত্যন্ত বিষাক্ত মহাজাগতিক রশ্মির ছোবল থেকে আমাদের প্রতি মুহূর্তে বাঁচায়। সৌর বিকিরণ ও মহাজাগতিক রশ্মি এসে পড়লে পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষেত্রই তা ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়, যতটা সম্ভব।
আরও পড়ুন: জঙ্গি ছিনিয়ে নিতে জেল ভাঙার ছক আইএসের, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে এল চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
নাসার সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত ৫০ বছরে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরের উপরে থাকা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ফাটলটা আকারে আরও বড় তো হয়েইছে, এমনকী, তা ভেঙে গিয়ে দু’টুকরো হয়েছে। তৈরি হয়েছে দু’টি বড় বড় ফাটলের। গত শতাব্দীর সাতের দশক থেকেই পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রটি দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে। তখনই এই চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি বড়সড় ফাটল দেখা দেয়।
এর আগে মে মাসে ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’ জানিয়েছিল, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র গত ২০০ বছরে ৯ শতাংশ কমজোরি হয়ে পড়েছে। আর সেই চৌম্বক ক্ষেত্রের যে এলাকায় ফাটলটি আকারে বেড়েছে ও সেটি ভেঙে দু’টুকরো হয়েছে, সেখানে চৌম্বক ক্ষেত্র গত ৫০ বছরে ৮ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের এই ফাটল-বৃদ্ধির কারণটা অবশ্য ভূ-প্রাকৃতিক।