বাংলাদেশের আওয়ামিলিগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়েছে এই বিবৃতি। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিবৃতি বলে সেটি আপলোড করা হয়েছে।
তিন মাস হয়ে গেল বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেষ হাসিনা। আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। এই প্রথম সরকারি বিবৃতি দিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তব প্রধানমন্ত্রী। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেমন অবস্থা বংলাদেশের -সেই কথাই উল্লেখ করেছেন হাসিনা। প্রবল আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই সময় দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। আশ্রয় নেন ভারতে। তারপর থেকে সরকারি কোনও বিবৃতি দেননি তিনি। এই প্রথম দিলেন বিবতি।
বাংলাদেশের আওয়ামিলিগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়েছে এই বিবৃতি। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিবৃতি বলে সেটি আপলোড করা হয়েছে। হাসিনার বার্তা
'জেলহত্যা দিবস। আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় ৩রা নভেম্বর। আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাত্র তিনমাসের মধ্যে এইদিনে জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে এইদিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমি জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় চারনেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।'
হাসিনা আরও বলেছেন, 'কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধি চক্র বাংলার মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল রাজনীতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ’৭৫-এর সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতদাতারা বিভিন্ন সময়ে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেও রক্ষা করতে পারেনি। হত্যাকারীদের বিচারের বদলে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে এবং রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বরাবরই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বারবার হামলা করেছে। কিন্তু দিনশেষে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকবে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতীয় চারনেতার জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।
আজকের অবরুদ্ধ বাংলাদেশ কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, শোক পালনের অধিকার নেই। পঁচাত্তরের পরেও কুচক্রিমহল একই পরিবেশ তৈরি করেছিল। আজ প্রশ্ন জাগে, মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিল? ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, সময়ের পরিক্রমায় একদিন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের চেতনা চির জাগরূক থাকবে এবং জাতীয় চারনেতার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শহীদ জাতীয় চারনেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।'
হাসিনার দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলেও আশান্ত রয়েছে বাংলাদেশ। হিন্দুদের ওপর বিদ্বেষ ক্রমশই বাড়ছে। এই অবস্থায় আওয়ামি লিগের নেতাদের কথায় সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবেই। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিনই মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের কথা অস্বীকার করা যাবে না।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।