বাংলাদেশের পাঠ্য়বই থেকে কি ক্রমাগতই বাদ পড়ে চলেছেন অ-মুসলিম কবি সাহিত্য়িকরা? সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য়পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-র বিরুদ্ধে অভিযোগই তুলেছেন হাসান আজিজুল হকের মতো সাহিত্য়িকরা।
যেমন নবম শ্রেণির বাংলা বই সাহিত্য় সংকলন থেকে বাদ পড়েছে বঙ্কিমভ্রাতা সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়ের পালামৌ। বাদ পড়েছে বাদ জ্ঞানদাসের সুখের লাগিয়া, ভারতচন্দ্রের আমার সন্তান, রঙ্গলাল বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের স্বাধীনতা, সুনীল গঙ্গোপাধ্য়ায়ের সাঁকোটা দুলছে, লালন শাহের সময় গেলে সাধন হবে না। এই বাদ পড়া যে নেহাতই কাকতালীয় নয়, তা স্পষ্ট হয়েছে, যখন এর বদলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে শাহ মোহাম্মদ সগীরের বন্দনা, আলাওলের হামদ, আব্দুল হাকিমের বঙ্গবাণী, গোলাম মোস্তফার জীবন ও বিনিময়, নজরুল ইসলামের উমর-ফারুক।
অষ্টম শ্রেণির দ্রুতপঠন আনন্দপাঠ থেকে বাদ পড়েছে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর রামায়ণ-কাহিনী। সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই সপ্তবর্ণা থেকে বাদ পড়েছে নায়ারণ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের লাল ঘোড়া। তার বদলে যুক্ত হয়েছে হবীবুল্লাহ বাহারের মরু ভাস্কর। ষষ্ঠশ্রেণির দ্রুতপঠনের নাম আনন্দপাঠ। সেখান থেকে বাদ পড়েছে শরৎচন্দ্রের লালু ও সত্য়েন সেনের লাল গরুটা আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলাদেশের হৃদয়।
বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরাও। তাঁদের প্রশ্ন, এভাবে কি পাঠ্য়বইয়ে অ-মুসলিম কবি, সাহিত্য়িকদের লেখা বাদ দিয়ে ইসলামি ভাবধারার লেখালেখি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে ঘুরপথে? আগুন পাখির লেখক হাসান আজিজুল হকের কথায়-- দেশের শিক্ষাব্য়বস্থাকে যতটা সম্ভব গোলমেলে করে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্য়াপক সৈয়দ মঞ্জরুল ইসলামের কথায়-- সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকেই রবীন্দ্রনাথ, মাইকেলের লেখা বাদ দেওয়া হচ্ছে। যাতে তাঁদের অবদান মানুষ ভুলে যায়। অথচ এঁদের ছাড়া সাহিত্য় কল্পনা করা যায় না।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এনসিটিবি-র চেয়ারম্য়ান নারায়ণচন্দ্র সাহা। তাঁর কথায়-- এমন কোনও উদ্দেশ্য় নেই। যা পরিমার্জন হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে।