দুটি চোয়ালে মোট ৫৫৫ টি দাঁত। রোজ আবার ২০টি করে পড়ে যায়, আবার সঙ্গে সঙ্গে গজিয়ে যায়। খুবই রহস্যময় প্যাসিফিক লিংকড (Pacific lingcod) মাছ।
দেখলেই গা শিরশির করে ওঠে। যেন এই পৃথিবীর কোনও প্রাণী নয়। দুটি চোয়ালে ভর্তি মোট ৫৫৫ টি ক্ষুরের মতো তীক্ষ্ণ দাঁত। বস্তুত, এই গ্রহের সবচেয়ে বেশি দাঁতওয়ালা প্রাণী বোধহয় এটিই। মুখের ভিতর শয়ে শয়ে দাঁতের আস্তরণ রয়েছে। আর সবথেকে মজার বিষয় হল, এই দাঁতগুলি আবার দ্রুত পড়েও যায়। কিন্তু, পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার দ্রুত গজিয়েও যায়। এই রাক্ষুসে মাছটির নাম হল, প্যাসিফিক লিংকড (Pacific lingcod)। এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই মাছগুলির প্রতিদিন ২০টি করে দাঁত খোয়া যায়, আবার সঙ্গে সঙ্গে গজিয়েও যায়।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Washington) জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে এই গবেষণা করা হয়েছে। প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি (Procidings of Royal Society) জার্নালে গত ১৩ অক্টোবর তাদের এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। অন্যতম গবেষক কার্লি কোহেন (Karly Cohen) জানিয়েছেন, প্যাসিফিক লিংকডের মুখের প্রতিটি হাড়ের উপরিভাগ দাঁতের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫৫ টি অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাঁত থাকে। তাদের গবেষণায় জানা গিয়েছে, এই মাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন ২০টি করে দাঁত পড়ে যায়। আবার সঙ্গে সঙ্গে গজিয়েও যায়।
দাঁতের এই গঠনই বলে দিচ্ছে এই মাছটি শিকারী মাছ অর্থাৎ প্রিডেটর ফিস (Predator Fish)। সাধারণত, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে (North pacific Ocean) দেখতে পাওয়া যায় প্যাসিফিক লিংকড মাছ। পূর্ণ বয়সে পৌঁছলে মাছটির দৈর্ঘ্য ২০ ইঞ্চি বা ৫০ সেন্টিমিটার মতো হয়। তবে কিছু কিছু লিংকড দেখা গিয়েছে যেগুলি দৈর্ঘে প্রায় ৫ ফুট বা ১.৫ মিটার।
মানুষের মুখে যেমন খাবার কেটে, টুকরো টুকরো করে, পিষে থেতো করার জন্য বিভিন্ন আকৃতির দাঁত থাকে, তা এই মাছের ক্ষেত্রে থাকে না। বরং, চোয়ালে শয়ে শয়ে ধারালো, ঘন সন্নিবিষ্ট আণুবীক্ষণিক দাঁত থাকে। তাদের শক্ত তালুও শত শত ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র দাঁতের আস্তরণে আবৃত থাকে। মূল চোয়ালের পিছনে থাকে আরেকটি আনুষঙ্গিক চোয়াল, যাকে ফ্যারিঞ্জিয়াল চোয়াল বলা হয়। এই চোয়ালটি লিংকড খাবার চিবানোর জন্য ব্যবহার করে।
এর আগে সবাই জানতেন, এই মাছের দাঁতের সংখ্যা যেমন এত বেশি, তেমনই এদের দাঁত পরেও প্রচুর। তবে, ঠিক কত পরিমাণ, তার ধারণা ছিল না। কার্লি কোহেন এবং গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক তথা সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্রী এমিলি কার (Emily Carr) এই সংখ্যা পরিমাপের জন্য ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাগারে ২০ টি প্যাসিফিক লিংকড মাছকে একটি ট্যাঙ্কে রেখেছিলেন। তাদের পড়ে যাওয়া দাঁতগুলি জমা হচ্ছিল সেই ফিস ট্যাঙ্কের নিচে। কিন্তু, তাদের দাঁতগুলি এতই ছোট, যে অ্যাকোয়ারিয়ামের মেঝে থেকে সেগুলিকে বের করা সহজ ছিল না।
ফলে দাঁতগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য, গবেষকরা লিংকডগুলিকে প্রথমে একটি পাতলা লাল রঞ্জক দিয়ে ভরা ট্যাঙ্কের মধ্যে রাখেন, তারপর একটি ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রঞ্জক ভরা ট্যাঙ্কে নিয়ে যান। দুটি ক্ষেত্রেই দাঁতগুলি রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। ফলে গণনা করা সহ হয়েছে। এরপর এক অন্ধকার পরীক্ষাগারে, একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে দাঁতগুলি রেখেছিলেন। তআর এভাবেই প্যাসিফিক লিংকডগুলির মুখ থেকে পড়ে যাওয়া দাঁতগুলি গোনেন তাঁরা। এমিলি কার জানিয়েছেন, তাঁদের গবেষণায় ধরা পড়েছে, মাছগুলির প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ টি করে দাঁত পড়ে যায়।
তাঁরা আরও একটি বিষয় দেখেছেন - ফ্যারিঞ্জিয়াল চোয়ালের দাঁতগুলি, লিংকডের মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক দ্রুত পড়ে যায়। কিন্তু, কেন এটি হচ্ছে তা এখনও জানা যায়নি। গবেষণা করতে কার এবং কোহেন দুজনেই খুবই উৎসাহী। তাঁরা ইতিমধ্য়েই দেখেছেন খাওয়ার উপর তাদের দাঁত পড়ার সংখ্যা নির্ভর করে না। কেন, এরকমভাবে দাঁত পড়ে যায়, সেই বিষয়টা এখনও রহস্যে ঢাকা।