সাপ-ভালুক নয়, এবার মানুষ যাবে 'শীতঘুম'-এ, ঝাঁপ দেবে অসীম কালোর দেশে

  • পৃথিবী-চাঁদের গণ্ডি পেরিয়ে গভীর মহাকাশে এখনও মানুষের পা পড়েনি
  • রসদ-সহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে
  • সমাধান হিসেবে ধরা হয় হাইবারনেশন বা শীতঘুমকে
  • এবার ইএসএ তৈরি করল মানুষকে শীতঘুমে পাঠিয়ে দূর মহাকাশে পারি দেওয়ার নকশা

 

amartya lahiri | Published : Nov 21, 2019 9:32 AM IST / Updated: Nov 21 2019, 03:10 PM IST

গভীর মহাকাশ, অর্থাৎ পৃথিবী-চাঁদের গণ্ডি পেরিয়ে সৌরমণ্ডলের দূরপ্রান্তে বা তারও বাইরে মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই স্যাটেলাইট, মহাকাশ দূরবিক্ষণ যন্ত্রবা ক্যামেরা পাঠাচ্ছে। কিন্তু, মানুষের পক্ষে এখনও চাঁদ পেরিয়ে আরও দূর মহাকাশে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এতদিনে মনে করা হচ্ছে এই সম্ভাবনা বাস্তব হতে চলেছে।

 গভীর মহাকাশে পারি দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দূরত্ব এবং সেই নিরিখে সময়। মানব জীবনের কয়েকটা বছর, মহাজাগতিক সময়ের নিরিখে কিছুই না। কাজেই গভীর মহাকাশে পারি দিতে যে সময় লাগবে তা এক মানব-জীবনে সম্ভব নয়। তাছাড়া সবচেয়ে বড় সমস্যা রসদের। দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রায় যে পরিমাণ রসদ লাগবে ও খরচ হবে, তা বহন করা অসম্ভব।

তাহলে উপায়? সেই জুল ভার্ন-এর সময় থেকে বিজ্ঞানীদের রসদ জুগিয়েছে কল্পবিজ্ঞান। গত কয়েক দশকে রূপোলি পর্দায় কিন্তু মানুষকে অনেকবারই গভীর মহাকাশে পারি দিতে দেখা গিয়েছে। 'এলিয়েন', 'পাসেঞ্জার্স', ইন্টাস্টেলার, বা ২০০১: স্পেস ওডিসি-র মতো ফিল্মগুলিতে গভীর মহাকাশে ভ্রমণের জন্য মানুষকে দীর্ঘসময় ধরে 'হাইবারনেশন'-এ অর্থাৎ সরীসৃপ বা কিছু প্রজাতির ভালুকের মতো শীতঘুমে থাকতে দেখা গিয়েছে। এই অবস্থায় মানুষের হৃদস্পন্দনের গতি কমে যায়। শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়াগুলিরও অধিকাংশই বন্ধ থাকে। বেসিক মোটাবলিক রেট বা বিএমআর ৭৫ শতাংশ কমে যায়। এইভাবে দীর্ঘ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকা যায়। এমনকি, হাইবারনেশনে যাওয়ার আগে ও পরে বয়সও অপরিবর্তিত থাকে। আর রসদ যে অনেক কম লাগে, তা বলাই বাহুল্য।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মানুষকে শীতঘুমে পাঠিয়ে গভীরতর মহাকাশ অনুসন্ধান চালানর সম্ভাবনা আছে কিনা তাই নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। সম্প্রতি এই সম্ভাবনা বাস্তব হওয়ার আশা দেখা দিয়েছে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)-র 'সাইস্পেস' টিম বাস্তবে নভোশ্চরদের হাইবারনেশন কীভাবে মহাকাশ স্পেস মিশনের নকশাকে প্রভাবিত করবে সেই সম্পর্কে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে।

কনকন্টার ডিজাইন ফ্যাসিলিটি (সিডিএফ)-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ইএসএ এই কাল্পনিক গবেষণাকে বাস্তব করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিল। ছয়জন মানুষকে মঙ্গলে পাঠিয়ে পাঁচ বছর পর ফিরিয়ে আনা হবে, এমন একটি কল্পিত পরিস্থিতি ধরে নিয়ে গবেষণার কাজ চালানো হয়। মূলত মানুষকে হাইবারনেশন-এ পাঠানোর ক্ষেত্রে, জরুরি অবস্থা, সুরক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের জটিলতাগুলি কীভাবে সামলানো যায় তাই নিয়েই গবেষণা করা হয়। এখনও পর্যন্ত তাদের গবেষণা মানুষকে ২১ দিনের জন্য হাইবারনেশন বা শীতঘুমে পাঠানোর জন্য নকশা তৈরি করতে পেরেছে। এখন কাজ চলছে সময়কালটা আরও বাড়ানোর জন্য।

Share this article
click me!