স্মরণে মাদার টেরেসা, ১০৯ তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সম্পর্কে সেরা কিছু তথ্য

Published : Aug 26, 2019, 01:56 PM ISTUpdated : Aug 26, 2019, 09:30 PM IST
স্মরণে মাদার টেরেসা, ১০৯ তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সম্পর্কে সেরা কিছু তথ্য

সংক্ষিপ্ত

মাদার টেরেসা ছিলেন একজন মাতৃরূপী মহিয়সী দেশের জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য তিনি তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছিলেন দেশের মানুষের সেবায় দেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আজও তাঁকে অমর করে রেখেছে

মাতৃরূপী মহিয়ষী নারী ছিলেন মাদার টেরেসা। দেশের মানুষের কাছে এই মহিয়সী এক নিদর্শন হয়ে রয়েছেন। ১৯১০ সালের ২৬ অগাস্ট যুগশ্লোভিয়ার (অধুনা মেসিডোনিয়া) স্কোপিয়ে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল মেরি টেরেসা বোজাক্সিউ। তিনি ছিলেন তাঁর পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান। ১৯১৯ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। পিতার মৃত্যুর পরে তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। ছোটবেলা থেকে তিঁনি ধর্ম সংক্রান্ত কাজকর্ম করতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। 

মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় সন্ন্যাস জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এর ঠিক ছয় বছর পরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং যোগ দেন সিস্টার অফ লরেটো সংস্থায়। ধর্ম প্রচারক হিসাবে কাজ শুরু করার পরে তাঁর আর কোনও দিন তাঁর মা ও দিদির সঙ্গে দেখা হয়নি। 

টেরেসা প্রথমে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং এই শিক্ষকতার সূত্র ধরেই তিনি ভারতে আসেন। তবে শিক্ষকতা নয় মাদার টেরেসার ভারতে আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সমাজসেবা। এই সমাজসেবা তাঁকে আজ অমর করে রেখেছে। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসাবে প্রথম শপথ নেন। সন্ন্যাস গ্রহণের সময়েই তাঁর নাম পরিবর্তন করেন এবং তাঁর নাম রাখা হয় টেরেসা। পরবর্তীকালে তাঁকে অবশ্য সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত শপথ নিতে হয়েছিল। সেই শপথ অবশ্য তিনি নিয়েছিলেন ১৯৩৭ সালের ১৪ মে পূর্ব কলকাতার একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময়।       

১৮৪৮ সাল থেকে টেরেসা জনসাধারণের মধ্যে ধর্ম প্রচার করা শুরু করেন। সেই সময়েই তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পোপের অনুপতি নিয়ে তিনি সেই সময়ে কলকাতার ১৪নং ক্রিক লেনের একটি ছোট ঘরকে কেন্দ্র করে মানব সেবার কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে তাঁর দিনগুলো বেশ কষ্টের মধ্যে কাটলেও পরে আস্তে আস্তে সবটাই তাঁর অভ্যাস হয়ে যায়। গরিবদের জন্য খাদ্য ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তাঁকে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরতে হত সেই সময়ে। পরে অবশ্য অবস্থার পরিবর্তন হয়। তাঁর কাজ মানুষের নজরে আসে ফলে সাধারণ মানুষও তাঁর পাশে দাড়াতে শুরু করে। ১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর তিনি কলকাতায় 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি' প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় কুষ্ঠরোগীদের সমাজে ব্রাত্য করে রাখার চল ছিল। ফলে কুষ্ঠরোগে আক্রান্তরা বিনা চিকিৎসায় অত্যন্ত দুরাবস্থার মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকতেন। মাদার টেরেসা প্রথম এই কুষ্ঠরোগীদের তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁর আশ্রমে ঠাঁই দিতে থাকেন এবং তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কুষ্ঠরোগীদের নিয়ে তাঁর কাজ শুধু ভারতবর্ষে নয় বিশ্বজুড়ে বন্দিত হয়েছিল। বহু কুষ্ঠরোগী মাদার টেরাসার সেবায় সুস্থ হয়ে জীবনে এক নতুন দিশা পেয়েছিলেন। মিশনারিজ অফ চ্যারিটি তৈরির সময় মাদার তাঁর সঙ্গে পেয়েছিলেন মাত্র ১০ জন সহযোগীনিকে। এছাড়াও তিনি গড়ে তোলেন শিশুভবন যা তিনি গড়ে তুলেছিলেন অনাথ শিশুদের জন্য। 
আরও পড়ুন ঈশ্বরের দূত, মাদার টেরেসার অন্যতম ১০টি উক্তি

কালিঘাটে তিনি গড়ে তোলেন কুষ্ঠ রোগীদের জন্য নির্মল হৃদয় নামক একটি সংস্থা। এছাড়াও তিনি কুষ্ঠ রোগীদের জন্য টিটাগড়, আসানসোল, দিল্লিতে আশ্রম তৈরি করেন। ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে তাঁর সেবা কেন্দ্র। ভারতের বাইরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া, পোল্যান্ড, যুগোশ্লোভিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর সেবা কেন্দ্রগুলি। সারা বিশ্বে তাঁর মোট ৪৭০ টিরও বেশি সেবা কেন্দ্র আছে। এছাড়াও তিনি গড়ে তুলেছিলেন ১২৪ টি স্কুল, ২২০ টি দাতব্য চিকিৎসালয়। শোনা যায় তিনি রাস্তা থেকে কুষ্ঠ রোগীকে তুলে এনে নিজের হাতে চিকিৎসা করেছিলেন। দেশের মানুষের জন্য তাঁর এই অবদান অনস্বীকার্য।    

তাঁর এই কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বহু পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে তাঁর কাজের জন্য পুরষ্কৃত করেছিলেন।  এছাড়াও তিনি কেনেডি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়েছিলেন, ভারতরত্ন এবং ১৯৯৭ সালে নোবেল পুরষ্কার পান। 

১৯৮৩ সালে পোপ জন পল২ এর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় তাঁর প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। এর পরেই পেসমেকার বসাতে হয়। এই ঘটনার পর থেকেই তাঁর শরীরের অবনতি হতে থাকে। সেই সময়েই তিনি মিশনারী অফ চ্যারিটির প্রধান পদ থেকে ইস্তফা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু কেউ-ই মাদার-এর জীবীতকালে তাঁর পদে আসিন হতে চাননি। ফলে মাদার-কে তাঁর সেই পদে থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছিল। 

১৯৯৬ সালে পড়ে গিয়ে তাঁর কলার বোন ভেঙে যায়। সেই বছরেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। ১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটির পদ থেকে সড়ে দাঁড়ান প্রবল অসুস্থ মাদার। ক্রমশ তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। সেই বছরেরই ৫ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে কেটে গেছে ২২টা বছর, তবে মানুষের জন্য তাঁর আত্মবলিদান আজও তাঁকে মানুষের মনে বাঁচিয়ে রেখেছে।    

      

PREV
click me!

Recommended Stories

৪০ মিনিট অপেক্ষার পরও দেখা হলো না রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে, পুতিনের ওপর চটলেন শাহবাজ শরিফ
LIVE NEWS UPDATE: নিজের ৭০ ফুটের মুর্তি নিজেই উদ্বোধন করলেন মেসি, ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে পাশে ছিলেন সুজিত বসু