চোখের সামনে লুটিয়ে পড়ল বাবা-মা, পরমুহূর্তেই কিশোরী মেয়ের রুদ্ররূপে ঝাঁঝরা জঙ্গি বাহিনী

তার বাবা ছিল সরকারের সমর্খক

তাই জঙ্গিরা মেরেছিল তার বাবা-মা দুজনকেই

কিশোরী মেয়েটার চোখের সামনেই

তখনও জঙ্গিরা জানত না তাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে

 

amartya lahiri | Published : Jul 22, 2020 9:35 AM IST / Updated: Jul 23 2020, 11:23 AM IST

গত সপ্তাহে যখন তাদের গ্রামের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সশস্ত্র তালিবানি জঙ্গিরা, তখন তাকে দেখে জঙ্গিরা কিচ্ছুটি টের পায়নি। কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে পরপর তার চোখের সামনে বাবা-মা'কে মরতে দেখার পরই, যেন মেয়েটার ভিতরে আগুন জ্বলে উঠেছিল। আর সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে অস্ত্র হাতে কাপুরুষ জঙ্গিরা।

মেয়েটির নাম কামার গুল। বয়স খুব বেশি হলে ১৪ কি ১৫ হবে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের খুব কাছেই ঘোর নামে এক গ্রামে তাদের বাড়ি। গত সপ্তাহে ঘোর গ্রামে তালিবানি জঙ্গি হানা গিয়েছিল কামার গুলের বাবার খোঁজে। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনি গ্রামের প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি সরকারের বড় সমর্থক। জঙ্গিরা জোর করে তাঁকে বাড়ি থেকে বাইরে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

কামার-এর মা বুঝে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামীর কী পরিণতি হতে চলেছে, বাইরে নিয়ে গিয়েই তাঁকে গুলি করা হবে। তাই প্রাণপণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তার ফল - সন্ত্রাসবাদীরা কামারের মা-বাবা দুজনকেই বাড়ির মধ্যেই গুলি করে হত্যা করেছিল। সামনে দাঁড়িয়ে সেই ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছিল কামার গুল।

এরপর জঙ্গিদের কিছু বুঝতে না গিয়েই চোখের পলক পড়ার আগেই সে তুলে নিয়েছিল একে-৪৭ অটোমেটিক রাইফেল। নিরাপত্তার খাতিরেই বন্দুকটি তাদের বাড়িতে রাখা ছিল। আর তারপরই জঙ্গিদের লক্ষ্য করে চালিয়ে দিয়েছিল সেই বন্দুক। যে দুই তালিবান জঙ্গি তাঁর বাবা-মা'কে গুলি করেছিল, তারা দুজনেই কামার গুলের বন্দুকের গুলিতে খতম হয়। তাদের সঙ্গীরাও বেশ কয়েকজন আহত হয়। ১৪-১৫ বছরের মেয়েটার ওই রুদ্ররূপ দেখে তারা আর প্রত্যাঘাতের সাহস পায়নি। গ্রাম ছেড়ে চম্পট দেয়।

পরে অবশ্য সন্ত্রাসবাদীরা আরো দলবল নিয়ে এসেছিল ওই কিশোরী মেয়ে কামার গুল-এর সন্ধানে। ততক্ষণে পুরো গ্রাম কামারের সাহসিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। সবাই তার হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল। জঙ্গিদের পাল্টা বন্দুকের গুলিতে জবাব দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেয় ঘোর গ্রামের বাসিন্দারা। তবে স্থানীয় পুলিশ বলছে, এই ঘটনার পর কামার গুল এখন জঙ্গিদের প্রধান নিশানায় পরিণত হয়েছে। তবে গ্রামবাসীরাও জানিয়েছে, বীরাঙ্গনাকে তাঁরা বুক দিয়ে আগলে রাখবেন। তবে, কাবুলের গভর্নর জানিয়েছেন আফগান নিরাপত্তা বাহিনী কামার গুল ও তার ছোট ভাই-কে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়েছে।

কামার গুলের এই সাহসিকতার কাহিনি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটিজেনরা তার দারুণ প্রশংসা করেছে। মাথায় হিজাব পরা, কোলে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে বসে থাকা তার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি বহু মানুষ শেয়ার করছেন তাকে 'নায়ক' সম্বোধন করে। তার সাহসিকতাকে টুপি খুলে অভিবাদন জানিয়ে অনেকেই বলছেন, কামার গুল দেখিয়ে দিয়েছে, আফগান মেয়েরা কত শক্তিশালী। এতে তার বাবা-মা ফিরে না আসলেও এই প্রতিশোধ তাকে অন্তত আপেক্ষিক শান্তি প্রদান করবে।

 

 

Share this article
click me!