মাশরুম এবং শ্যাওলা-র ফটোগ্রাফির জন্য তিনি পৃথিবী বিখ্যাত।
অথচ, গত ৪৫ বছর ধরে মাঠে ঘাটেই মলত্যাগ করেন মাসানা ইজওয়া।
এর পিছনে কাজ করে তাঁর সংরক্ষণবাদী সত্ত্বা।
প্রকৃতিতে মলত্যাগের মাধ্যমে তিনি জীবন ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে দাবি তাঁর।
মাশরুম এবং শ্যাওলা-র ফটোগ্রাফির জন্য তিনি বিশ্বের অন্যতম সম্মানিয় ব্যক্তি। অথচ, এই বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার মাসানা ইজওয়া-রই এমন একটি স্বভাব রয়েছে যা সকলকে বিস্মিত করে দেয়। গত ৪৫ বছর ধরে তিনি দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুন শৌচাগারে মলত্যাগ করেন না। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তিনি চলে যান প্রকৃতির বুকেই, মাঠে, ঝোপে-ঝাড়ে, যেখানে জায়গা পান বসে পড়েন। এমনকী পাঁচতারা-সাততারা হোটেলে থাকলেও তিনি একই কাজ করে থাকেন। আসলে এর পিছনে কাজ করে তাঁর আরও একটি সত্ত্বা, তিনি একজন সংরক্ষণবাদী-ও বটে।
টোকিওর উত্তরে ইবারাকি রাজ্যে তাঁর বাড়ি। ১৯৭৫ সালে সেখানে স্থানীয় এক বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরিতে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। সেই নিয়ে তীব্র বিবাদে জড়িয়েছিলেন ইজওয়া। তারপরই প্রকৃতিকে বাঁচাতে তিনি ঘরের শৌচাগারে মলত্যাগ করা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রায় গত ৫০ বছর ধরে তিনি বাড়ির বাইরে একটি নির্জন স্থানে পেট খালি করে থাকেন। ৬৯ বছর বয়সী এই জাপানি ফটোগ্রাফারের দর্শন অতি সরল। তিনি বলেছেন, মানব সভ্যতা পৃথিবী থেকে সম্পদ গ্রহণ করে চলেছে, কিন্তু তবে কিছুই ফেরত দেয় না। তিনি এই ফেরত দেওয়ার কাজই করে চলেছেন।
তবে, ইজওয়া স্বীকার করেছেন, বাড়ির নিশ্চিন্ত ঘেরাটোপে মলত্যাগ করা য়াদের অভ্যাস, তাদের পক্ষে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করাটা বেশ কঠিন। তবে একবার এই উদ্যোগ নিলে শারীরিক বা মানসিকভাবে বিষয়টা অস্বস্তিকর হয় না। এই নতুন অভ্যাসটি সুরু করার পর গত ৪৫ বছরে ইজওয়া মাত্র ১৪ বার বিভিন্ন জায়গার শৌচাগার ব্যবহার করেছেন। আর খোলা আকাশের নিচে কাজ সেরেছেন প্রায় ১৫,০০০ বারেরও বেশি।
ইজওয়া আরও বলেছেন যে কোনও রকম খাদ্য গ্রহণ করা মানেই প্রাণহানি। তবে খাদ্যগ্রহণ মানুষের অধিকার। তবে মলত্যাগ করাটা কিন্তু অধিকার নয়, দায়িত্ব। এই নিয়ে মানুষের 'সচেতন হওয়া দরকার'। বাইরে মলত্যাগ করাটা তাঁর কাছে, খাদ্য গ্রহণের সময় মানুষ যে প্রাণ কাড়ছে, সেই 'জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার' একটি উপায়। ইজওয়া আরও জানিয়েছেন, এ শুধু মুখের কথা নয়, হাতে নাতেই তিনি তাঁর দর্শন যে ঠিক, তার প্রমাণ পেয়েছেন। মাটি দিয়ে তিনি যখনই কোনও অস্থায়ী শৌচাগার ঢাকা দেন, তার কয়েকদিন পর থেকেই সেখানে গাছপালা জন্মাতে শুরু করে। নতুন 'প্রাণ'-এর জন্ম হয়।