
দুই তাবড়ের সংঘাতে থরহরি কম্পমান ছিল বিশ্ব। চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে আপাতত শুল্কসংঘাত কাটিয়ে উঠে সম্প্রতি বেজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেছে ওয়াশিংটন। তবে ঠাণ্ডা লড়াই শেষ কি আদৌ হয়েছে! হিসেব বলছে, না, সেটা জারি রয়েছে বহাল তবিয়তে। কারণ দিন কয়েক আগেই চিনের সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ -এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সারতে গিয়ে যেন চিনের স্বার্থের কোনও ক্ষতি না-হয়। কিনতু পালটা আমেরিকার তরফে সেভাবে কোনও বিবৃতি না আসলেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।
আমেরিকার উস্কানি
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে আমেরিকা সেভাবে মুখ না খুললেও, ঈশান কোণে মেঘ জমছে চিনের। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের উস্কানিতে চিনের লাল ফৌজে বিদ্রোহের সুর চড়তে পারে, সেদিনও নাকি বেশি দূরে নয়। কারণ ইতিমধ্যেই চিনা লালফৌজের দুই শীর্ষ কমান্ডার এবং এক পরমাণু বিজ্ঞানীকে দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করেছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, বাহিনীতে বিদ্রোহের আশঙ্কা থাকায় এই পদক্ষেপ করেছেন তিনি। যদিও তা মানতে নারাজ বেজিং।
চিনের সেনা অভ্যুত্থানের শঙ্কা
উল্লেখ্য, ২১শে মে থেকে ৫ই জুনের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি বা সিসিপি ও পিপলস লিবারেশন আর্মির মধ্যে অভ্যন্তরীণ ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে জল্পনা যে শুধু রটনাতেই আটকে নেই, তা প্রমাণ হচ্ছে ধীরে ধীরে। তাহলে এবার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সরে যাওয়ার মুহুর্ত সামনে চলে এল! অভিজ্ঞরা বলছেন একসময় সিসিপি নেতৃত্ব এবং পিএলএ-র মধ্যে যে আস্থা ছিল তা ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে ফাটল, আর তা বিশ্বের নজরে পড়ছে।
আমেরিকা চিন বাণিজ্য সম্পর্কে ভাঁটা?
এদিকে, ২০২৪ সালে চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট পণ্য বাণিজ্য ছিল আনুমানিক ৫৮২.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালে চিনে মার্কিন পণ্য রপ্তানি ছিল ১৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২.৯ শতাংশ (৪.২ বিলিয়ন ডলার) কম। ২০২৪ সালে চিন থেকে মার্কিন পণ্য আমদানি মোট ৪৩৮.৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২.৮ শতাংশ (১২.১ বিলিয়ন ডলার) বেশি।
চিন এবং আমেরিকা বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি। উভয় দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হলেও বাণিজ্য নিয়ে তাদের মধ্যে নানা টানাপোড়েন রয়েছে। চিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আমদানি-রপ্তানি অংশীদার। আমেরিকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (Apple, Tesla, Microsoft) চিন এ বিপুল ব্যবসা করে। চিন আমেরিকার কাছ থেকে আধুনিক চিপস এবং প্রযুক্তি কেনে আবার আমেরিকা চিনের তৈরি পণ্য আমদানি করে। তবে শুল্ক যুদ্ধের পর চিনা কোম্পানিগুলো (Huawei, TikTok, BYD) মার্কিন বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চিনে ব্যবসা হারাবে, যার ফলে কর্মসংস্থান ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্বব্যাপী টেকনোলজি ডিভাইড তৈরি হবে, যার ফলে ভারত সহ উন্নয়নশীল দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।