ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ১৫৪ জন সদস্য় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে "বিশ্বে রাষ্ট্রহীনতার পক্ষে সবচেয়ে বড় সঙ্কট ও মানুষের দুর্দশার কারণ" বলে মনে করছে। বাংলাদেশ সরকারও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, ভারতের অভ্য়ন্তরীণ বিষয় হলেও এই আইনের কোনও প্রয়োজন ছিল না। মার্কিন ধনকুবের থেকে শুরু করে সত্য় নাদেলা, নোয়াম চমস্কি সবাই এই আইনের প্রবল সমালোচনা করছেন। আন্তর্জাতিক মহলে যখন মোদী সরকার এই নয়া আইনকে নিয়ে কার্যত কোণঠাসা, তখন এগিয়ে এলেন কানাডিয় লেখক ও সাংবাদিক তারেক ফাতাহ। বলতে গেলে এদেশের গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধিদের মতোই তিনি তাঁর ঝুলি থেকে বার করেন এই আইনের সপক্ষে যুক্তি। দেশভাগের প্রসঙ্গ টেনে তারেক প্রশ্ন তোলেন, "ধর্মের নামে যখন মুসলিমদের পুরো একটা দেশ(পাকিস্তান) দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন সেকুলারপন্থীরা কোথায় ছিলেন?"
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে এক জনসভায় বিজেপির রাজ্য় সভাপতি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মেরুকরণের অভিযোগে প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, "হিন্দু-মুসলমান করি বেশ করি, যখন ওরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।" এখানে 'বিশ্বাসঘাতকতা' বলতে দেশভাগের কথাই বোঝাতে চেয়েছিলেন দিলীপবাবু। এবার কার্যত একই ভাষায় সংশোধিক নাগরিকত্ব আইনের সপক্ষে সওয়াল করলেন এই কানাডিয় লেখক। তারেকের কথায়, দেশভাগের সময়ে ধর্মের নামে আর একটা দেশ গড়ে উঠল, পাকিস্তান। তারও পর, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে তৈরি হল বাংলাদেশ। প্রথমে ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেও পরে কিন্তু বাংলাদেশও ইসলামিক দেশে পরিণত হল। তখন ভারতীয় সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার কথা। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি সে কথায় কর্ণপাত করেননি। অথচ, বাংলাদেশ কিন্তু একসময়ে অবিভক্ত বাংলারই অংশ ছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান বনাম পূর্ব পাকিস্তানের মধ্য়ে সংঘাত তৈরি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা পাকিস্তানের থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়ে বিদ্রোহ করেন। পাল্টা নিপীড়ন চালায় পাকসেনা। মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে চলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য় লড়াই। ভারত তখন সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সমর্থন করে সেনাবাহিনী দিয়ে সাহায্য় করে। যদিও প্রথমে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকলেও পরে তা ইসলাম রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
অবশ্য় তারেকের বক্তব্য়ের সঙ্গে অনেকেই একমত হতে পারছেন না। তাঁদের মতে, দেশভাগ অত্য়ন্ত জটিল বিষয়। অত সহজে দেশভাগকে বিশ্বাসঘাতকার কাজ বলে মত দেওয়া বিচক্ষণতার পরিচয় নয়। আর তাছাড়়া, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হবে বলেই তো ভারত তখন সেনাবাহিনী দিয়ে সাহায্য় করেছিল। এরপর যদি স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতে অন্তর্ভুক্তি করে নেওয়া হত, তবে সেটাই তো হত বিশ্বাসঘাতকতার কাজ।