
আল জাজিরার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান সরকার লক্ষ লক্ষ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসীদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে, অন্যথায় তাদের গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১ সালে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের পর তালিবান ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং তালিবান শাসন থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে যে শরণার্থীরা ইরানে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ৬ জুলাইয়ের মধ্যেই আফগান শরণার্থীদের ইরান ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে তেহরান।
আল জাজিরার মতে, ইজরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর উত্তেজনা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ বৃদ্ধির মধ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেখানে ২১-২২ জুন "অপারেশন মিডনাইট হ্যামার" এর অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকেও লক্ষ্যবস্তু করেছিল। মানবিক সংস্থাগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সতর্ক করেছে যে, ব্যাপকভাবে দেশান্তর বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফগানিস্তানকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
ইরান বর্তমানে প্রায় ৪০ লক্ষ আফগানকে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের অনেকেই বহু বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, কর্তৃপক্ষ বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি ছাড়া আফগানদের স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করার জন্য জুলাইয়ের প্রথম দিক পর্যন্ত সময় দিয়েছিল, অন্যথায় তাদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছিল বলেও আল জাজিরা জানিয়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, তারপর থেকে ৭ লক্ষেরও বেশি আফগান দেশ ছেড়েছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র জুন মাসেই ২ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ রয়েছে। আরও কয়েক লক্ষ মানুষ দেশ ছাড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
আল জাজিরা, ইউএনএইচসিআর-এর মতামত উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ইজরয়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় ইরান শরণার্থীদের ছাড়তে বাধ্য করেছিল। প্রতিদিন ৩০,০০০ এরও বেশি আফগানকে ফেরত পাঠায় - যা আগের দৈনিক গড় ২,০০০ থেকে অনেক বেশি।ইরানি কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন যে তারা কেবল আফগানদের টার্গেট করছেন না এবং বলছেন যে পদক্ষেপগুলি জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছিল।
আল জাজিরার বরাত দিয়ে ইরানি সরকারের মুখপাত্র ফাতেমে মোহাজেরানি মঙ্গলবার বলেছেন, "আমরা সর্বদা ভালো আতিথেয়তা করার চেষ্টা করেছি, তবে জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকার, এবং স্বাভাবিকভাবেই, অবৈধ নাগরিকদের ফিরে যেতে হবে।" জুনের শেষের দিকে, ২০২৫ সালে দেশে ফিরে আসা ১২ লক্ষ আফগানের অর্ধেকেরও বেশি ইরান থেকে এসেছিল। আফগানিস্তানে ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা আরাফাত জামাল সীমান্তে বিশৃঙ্খল দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে আফগান পরিবারগুলি বাসে করে আসছে, বিভ্রান্ত, ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত। জামাল আল জাজিরাকে বলেছেন, "তারা বাসে করে আসছে, এবং কখনও কখনও, একসঙ্গে পাঁচটি বাস পরিবার এবং অন্যদের নিয়ে আসে, এবং লোকজনকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়, এবং তারা কেবল বিভ্রান্ত, দিশেহারা এবং ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্তও।"
যদিও কিছু আফগান স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছে, অনেককে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ইউএনএইচসিআর ইরান থেকে প্রত্যাবর্তনের একটি বৃহত্তর ধরণ বলে অভিহিত করেছে।