
World Food Crisis: পারমাণবিক যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কেবল তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণ ও প্রাণহানিতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর গভীর প্রভাব পড়তে পারে আগামী বছরগুলোতেও, যেখানে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট, জলবায়ু বিপর্যয় এবং মানবজাতির অস্তিত্ব সংকটের দিকে। এমন একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করুন, যেখানে ঘন ধোঁয়ার আড়ালে সূর্যের আলো অদৃশ্য হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, তাপমাত্রা হ্রাস পায়, ফসল নষ্ট হওয়া এবং মুদি দোকানের তাকগুলি খালি হয়ে যায়। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্যই চিত্রায়িত হয়েছে পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায়, যেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে পারমাণবিক যুদ্ধ আমাদের বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
কী বলছে গবেষণা?
গবেষকেরা ছয়টি ভিন্ন পারমাণবিক যুদ্ধের দৃশ্যপটে সাইকেলস কৃষি বাস্তুতন্ত্র মডেল ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ছোট আঞ্চলিক সংঘাত থেকে শুরু করে বৃহৎ বৈশ্বিক সংঘর্ষ। এই পরিস্থিতিতে আকাশে অগ্নিঝড় উঠতে পারে বিশাল পরিমাণে — ৫ থেকে ১৬৫ মিলিয়ন টন পর্যন্ত। এতে সূর্যের আলো ঢেকে যাবে, তাপমাত্রা হ্রাস পাবে এবং সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে ফসলের ওপর।
এতে বিশ্বজুড়ে ভুট্টা উৎপাদন কমে যেতে পারে ৭ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। আর যদি এতে UV-B বিকিরণ ক্ষতির উপাদানও যুক্ত হয়, তবে এই হ্রাস ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পেন স্টেটের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী গবেষণা অধ্যাপক ইউনিং শি বলেন, "বিশ্বব্যাপী শস্য উৎপাদনে ৭ শতাংশ হ্রাসও বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।"
গবেষণায় ফসল হিসেবে ভুট্টা বেছে নেওয়ার কারণ?
শস্য হিসেবে ভুট্টা বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ এটি বিশ্বজুড়ে সহজলোভ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ভুট্টার ক্ষেত্রে যা প্রভাব পড়বে তা সম্ভবত অন্যান্য অনেক ফসলের ক্ষেত্রেও ঘটবে।
ক্ষতি কতটা হতে পারে?
ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে হবে না। বোমা ফেলার ৬ থেকে ৮ বছর পরে UV স্তর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে, বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া পারমাণবিক বিস্ফোরণে অগ্নিঝড় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে নাইট্রোজেন অক্সাইড তৈরি করবে, যা শোষণকারী কাঁচ থেকে তৈরী উত্তাপ দ্রুত ওজোন স্তর ধ্বংস করতে পারে। সাথে জলবায়ুর পরিবর্তন মারাত্মকভাবে উদ্ভিদের টিস্যুর ক্ষতি করে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন হ্রাস করবে।
কীভাবে করা হয়েছে গবেষণা?
উচ্চ-কার্যক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটিং এর সাহায্যে, মডেলটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ফসলের বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিতে পারে, এমনকি পারমাণবিক বিপর্যয়ের ছায়ায়ও। শি বলেন, আমরা ক্রমবর্ধমান তীব্রতার ছয়টি পারমাণবিক যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ৩৮৫৭২টি স্থানে ভুট্টা উৎপাদন সিমুলেটেড করেছি ৫ থেকে ১৬৫ টন পর্যন্ত সট ইনজেকশন দিয়ে।
তবে সমাধান কী হতে পারে?
গবেষকেরা বলছেন, কিছু কৃষি স্থিতিস্থাপকতা সরঞ্জাম (agricultural resilience tools) থাকলে ভবিষ্যতে ক্ষতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন—ঠান্ডা সহ্য করতে পারে এমন দ্রুত বর্ধনশীল ভুট্টার জাত ব্যবহার করা যেতে পারে, যা যেকোনো জলবায়ুতে সহনশীল, স্বল্প সূর্যালোকে, বেড়ে উঠতে সক্ষম ফসল হবে। এই ধরনের উদ্ভাবনী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খাদ্য উৎপাদন ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব, যা হয়তো নিরুত্তর পরিস্থিতিতেও মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।