কোনও চকোলেটের বিজ্ঞাপন নয়, জাপানের শোজি মোরিমোতো বাস্তব দুনিয়াতেই কিছু না করার জন্য এক এক দিনে উপার্জন করেন প্রায় ১২ হাজার টাকারও বেশি।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে বাস করেন ৩৯ বছর বয়সী যুবক, নাম শোজি মোরিমোতো। এমন একটি বিশেষ উপায়ে তিনি উপার্জন করেন বিশাল অঙ্কের টাকা, যে উপায়টি শুনলে তাঁকে হিংসা করে ফেলবেন এই পৃথিবীর যে কোনও পূর্ণ বয়স্ক মানুষই। আমরা অনেকেই একটি বিশেষ চকোলেটের বিজ্ঞাপনে ট্যাগলাইন শুনতে পাই, ‘কখনও কখনও কিছু না-করেও দ্যাখো’। ঠিক এই ট্যাগলাইনটিই শোজির জীবনে বাস্তব ঘটনা।
রোজগেরে জীবনের শুরুতে একটি প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করতেন টোকিওর এই যুবক। সেই সংস্থায় কোনও কাজ না-করার জন্য ভীষণভাবে বকুনি দেওয়া হত তাঁকে। বলা বাহুল্য, কিছু না করলে একজন কর্মীকে যে কোনও সংস্থাই তিরস্কার করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু, শোজি নিজের জায়গা থেকে নড়ার পাত্র নন। তিনি ঠিক করে নিলেন, কোনও কাজ না-করাই তাঁর উপার্জনের প্রধান পাথেয় হবে। তারপরেই তিনি তাঁর একটি ‘অ’কাজের মূল্য নির্ধারণ করলেন ১০ হাজার ইয়েন, অর্থাৎ, ৬ হাজার ১১৫ টাকা। কী সেই ‘অ’কাজ?
সোশ্যাল মিডিয়ায় শোজির প্রোফাইল দেখে তাঁকে বুক করেন তাঁর মক্কেলরা। এই মক্কেলদের কাছে তাঁর কাজ হল, কিছু না-করে চুপচাপ সঙ্গ দেওয়া। ‘আমার কাজ হল, আমার ক্লায়েন্টরা যেখানে আমাকে থাকতে বলেন, সেখানে থাকা এবং কিছু না করে তাঁদের সঙ্গ দেওয়া।’ এই ধরনের সঙ্গ দেওয়ার ঘটনাও সবসময়ে যে খুব স্বাভাবিক হয়, তা নয়। মোরিমোতোকে একবার এক মক্কেল বুক করেছিলেন নিজের সঙ্গে একটি খেলার পার্কে গিয়ে স্রেফ ঢেঁকি চড়ার জন্য। আর এক মক্কেল নিজের জীবনে কোনও মানুষকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন বলে শোজি মোরিমোতোকে ১০ হাজার ইয়েন দিয়ে বুক করেছিলেন। শোজি তাঁর চাহিদামতো একটি ট্রেনে উঠে ট্রেনটি ছাড়ার পর জানলা দিয়ে হাত নেড়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মক্কেলকে বিদায় জানিয়েছিলেন। অরুণা চিড়া নামের এক তরুণী একবার শাড়ি পরে জাপানের রাস্তায় বেরোতে ইতস্তত করছিলেন বলে তিনি ১০ হাজার ইয়েন খরচ করে শোজি মোরিমোতোকে বুক করেন। এরপর অরুণা জাপানের একটি রেস্তরাঁয় শোজিকে নিয়ে খাবার খেতে যান এবং শোজি সেখানে অরুণার চাহিদামতো কিছু না করে, কোনও কথা না বলেই চুপচাপ বসে থাকেন।
অর্থাৎ, যেসব মানুষরা জীবনে সঙ্গীর অভাব বোধ করেন, তাঁরা আর্থিক মূল্য দিয়ে শোজিকে বুক করতে পারেন। তবে, এখানে শোজির নির্দিষ্ট করে দেওয়া কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। শোজি ক্লায়েন্টদের কোনও কাজ করেন না এবং তিনি কোনও মক্কেলের সঙ্গে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হন না। একবার এক মক্কেল তাঁকে একটি ফ্রিজ সরাতে বলেছিলেন বলে শোজি তাঁর বুকিং ক্যান্সেল করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ ঊনআশি হাজার। সাধারণত এখান থেকেই তাঁকে বুক করেন সাধারণ মানুষ। যার মধ্যে একজন মক্কেল তাঁকে প্রায় ২৮০ বার বুক করেছেন বলে জানিয়েছেন শোজি। সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, কখনও কখনও এক দিনে শোজি ৪ জনেরও বেশি মক্কেল পেয়ে যান। মাত্র ৪ বছরে তাঁর সেশন-সংখ্যা পেরিয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি। একটি সেশনে তিনি নেন ১০ হাজার ইয়েন, অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার টাকা।
“মানুষজন যদি মনে করে থাকেন যে, তাঁদের দরকারের জন্য আমার 'কিছু না করা'-টা মূল্যবান, তাহলে সত্যিই কিছু না-করাই ভালো। সব মানুষকে নির্দিষ্ট যে কোনও উপায়েই কাজে লাগতে হবে, এটা মোটেই জরুরি নয়”, জানিয়েছেন জাপানের ‘কিছু না-করা’ শোজি মোরিমোতো।
আরও পড়ুন-
নববর্ষের সূচনায় বাংলা ভাষায় শুভেচ্ছা জানালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, সাধারণ মানুষের জন্য খুলে যাচ্ছে রাজভবন
৪৩ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছে বাঁকুড়ার তাপমাত্রা, পয়লা বৈশাখেও তাপপ্রবাহে জেরবার পশ্চিমবঙ্গ
বলিউডের সম্ভাবনাময়ী তারকা: নবাগতা অভিনেত্রী আলায়া এফ-কে দেখে বললেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া