শান্তিপুরের ৫০০ বছরের পুজো: রায় বাড়ির দুর্গাপুজোর, একা মায়ের অজানা কাহিনি

Published : Sep 18, 2025, 05:15 PM IST
Ai Generated WB Shantipur Roy Family Durga Puja

সংক্ষিপ্ত

নদিয়ার শান্তিপুরের রায় বাড়ির দুর্গাপুজো ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এখানে দেবী দুর্গা তাঁর সন্তানদের ছাড়া একাই পূজিত হন। হাতে খড়্গর পরিবর্তে রয়েছে মাটির তলোয়ার। সন্ধিপুজোর পর দেবীকে মাছের ভোগ নিবেদন করা এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

পাড়ার বা ক্লাবের পুজোয় যতই থিমের রকমারি থাক ঐতিহ্যবাহী বনেদিয়ানায় দুর্গাপুজো রীতিমতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টেক্কা দেয়। জনপ্রিয়তার নিরিখে এই বিষয়ে কেউই পিছিয়ে নেই। আমরা যতই আলোর ঝলকানি থিমের সমারহো পছন্দ করি পাশাপাশি বনেদি বাড়িতে মেয়ে রূপে মায়ের পুজো মনে এক আলাদা প্রশান্তি এনে দেয়। তখন মনে হয় থিমের দুর্গা নয় এই আমার সেই মা, যার জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি। বনেদিবাড়ির দু্র্গাপুজোগুলি হল শিউলি ফুলের মতো যার গন্ধ ছাড়া দু্র্গাপুজো অসম্পূর্ণ বলে মনে হল।

ঠিক এমনই ৫০০ বছরের বেশি পুরনো শান্তিপুরের রায় বাড়ির তথা জমিদার বাড়ির পুজো

পুরনো নকশা কাটা দোতলা বাড়ি। এক অংশে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। সামনে ফাঁকা চত্বর। পাশেই দেবীর দালান ঘর। নদিয়ার শান্তিপুর স্টেশন থেকে বাইক, নয়তো গাড়ি করে মিনিট কুড়ির পথ। শান্তিপুরের রায় বাড়ি। জমিদার পরিবার। তাঁদের দুর্গাপুজো প্রায় ৫০০ বছরের বেশি পুরনো। মা দুর্গা এখানে ‘কুলোপতি’ দেবী নামে পরিচিত। দেবীর রূপ সাধারণই। দশ হাতে অসুর বধ করছেন তিনি। অসুরের চেহারায় রয়েছে বদল। হাতে খড়্গর পরিবর্তে রয়েছে মাটির তলোয়ার।

শহর বা শহর ছাড়িয়ে বিভিন্ন বনেদি পুজোতে দেবী তাঁর সন্তানদের সঙ্গেই পূজিত হন। কিন্তু এঁদের এখানে তাতেও বদল। শান্তিপুরের রায়বাড়ির পুজোয়‌ মা দুর্গা একা একাই পূজিত হন। নেই লক্ষী-সরস্বতী, গণেশ-কার্তিককে। রায় বাড়িতে মা একা। একদম শুরুর দিকে ‘কুলো’কে দেবীর হিসেবে পুজো করা হত। তার পরে কিছু সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর মূর্তি তৈরি শুরু হয়। তা’ও শুধুই দুর্গার। কথিত আছে, এখানে পুজো শুরু হয় মায়ের ‘স্বপ্নাদেশ’ পাওয়ার পর। এ নিয়ে একটি কাহিনি চালু আছে।

সেই কাহিনি বলে, রায় পরিবারের কাছে এক মহিলা একা এসে কিছু সাহায্য চান। লাল পাড়ের শাড়িতে এসেছিলেন তিনি। সেই মহিলা রায় পরিবারের ‘কর্তা মা’কে বলেন, ‘আমার স্বামী শ্মশানে-শ্মশানে ঘুরে বেড়ান। সন্তানরা রয়েছে। আমাকে সাহায্য করুন।’

তখন জমিদারি পরিবারের তরফ থেকে বলা হয়, সন্তানদের নিয়ে আসুন। সাহায্য করা হবে। এর পরেই রাতের বেলায় স্বপ্নাদেশ পান তাঁরা। স্বপ্নে মা জানান, তিনি রায় পরিবার হাতে পুজো পেতে চান।

পরিবারে তরফে দুর্গাপুজো করার সামর্থ্য না থাকায় ‘কুলো’রূপে মাকে পুজো করা শুরু হয়। এই কথাও নাকি দেবী নিজেই স্বপ্নাদেশে বলেছেন। তার পরে আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে জমিদার পরিবারের তরফ থেকে শুধুমাত্র দেবী দুর্গার মূর্তি বানিয়ে পুজো করা শুরু হয়।

রায় বাড়ির দুর্গা পুজোতে ভোগের ক্ষেত্রেও বিশেষত্ব রয়েছে। পঞ্চমী থেকে মায়ের ভোগ দেওয়া শুরু হয়। এর পর মায়ের বোধনের থেকে সাধারণ নিয়ম মেনেই ভোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে সন্ধির পুজোর পর মায়ের ভোগে দুই রকম মাছ দেওয়া হয়। ভোগের জন্য প্রতিদিন পায়েস রান্না হয় এখানে। দশমীর দিন দেবীকে বিদায় জানানোর সময় পায়েস মুখেই বিদায় জানানো হয়। এবারেও সেজে উঠছে রায় বাড়ি। 

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Durga Puja 2025: সঙ্ঘাতির 'দ্বৈত দুর্গা' থিমে বাংলার দুর্গা এবং শেরাওয়ালি মাতা, বিষয়টা ঠিক কী?
Durga Puja 2025: দুর্গাপুজোয় চাঙ্গা রাজ্যের অর্থনীতি? ১০-১৫% বৃদ্ধির সম্ভাবনা, আনুমানিক ৪৬,০০০-৫০,০০০ কোটি টাকা