অনেকে আবার মনে করেন জষ্ঠিমাসের কৃষ্ণপক্ষের সাবিত্রী চতুর্দশী তিথিতে স্ত্রীরা স্বামীদের দীর্ঘজীবন কামনা করে যমের আরাধনা করতেন। এই লোকাচারটির সূত্র ধরেই কলকাতার বাবু সংস্কৃতিতে নাকি জামাই ষষ্ঠীর অনুপ্রবেশ।
সম্পূর্ণ বঙ্গ ও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ষষ্ঠী দেবীর নামে বহু ব্রত প্রচলিত আছে। বিহার, উত্তরপ্রদেশের কিছু অঞ্চল ও মিথিলাঞ্চলে এই ষষ্ঠীদেবীর উদ্দেশ্যেই ছট্-পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই ব্রত বিহার ও মিথিলাঞ্চলের গৃহস্থদের সবথেকে কঠিনতম ব্রতের মধ্যে অন্যতম। সনাতন হিন্দু ধর্মে প্রতিমাসের শুক্লাষষ্ঠী তিথিতে বিভিন্ন নামে ষষ্ঠীদেবী পূজিতা হন। সন্তানের মঙ্গল কামনার্থে অনেকেই দেবী ষষ্ঠীর পুজো করে থাকেন।
শাস্ত্র মতে, অনেকগুলি ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে দেখা যায়। মূলা ষষ্ঠী, অশোকা ষষ্ঠী, লুন্ঠন ষষ্ঠী, পাটাই ষষ্ঠী, দুর্গা ষষ্ঠী, চাপড়া ষষ্ঠী ইত্যাদি। আর জ্যৈষ্ঠ মাসের জামাইষষ্ঠী এগুলির মধ্যে একটি। মূলত সন্তানের দীর্ঘায়ু, রোগ-শোক হীন জীবন প্রাপ্তির আশায় মায়েরা এই ব্রত করেন।
এই দেবীর নির্দিষ্ট অবয়ব নেই। মঙ্গল ঘটে আঁকা মূর্তি, শিল, পিটুলি দিয়ে তৈরি মূর্তি, ঘটে পোঁতা বটগাছের ডাল ইত্যাদিতে ষষ্ঠীদেবীর প্রতিমা কল্পনা করা হয়। দেবীর বাহন কালো বিড়াল। স্বামী নির্মলানন্দ তার 'দেব-দেবী ও তাদের বাহন' গ্রন্থে লিখেছেন যে বিড়াল হলো প্রজনন শক্তির প্রতীক। স্ত্রী বিড়ালের দুগ্ধ নাকি স্ত্রীরোগের আরোগ্যলাভের অন্যতম মেডিসিন। এমন প্রাচীন লোকবিশ্বাসের সূত্র ধরেই নাকি ষষ্ঠীর বাহন বিড়াল।
সারা বছরে ষষ্ঠী পুজোয় নিজের সন্তানদের মঙ্গল কামনাই হয়ে ওঠে মুখ্য। অনেকে আবার মনে করেন জষ্ঠিমাসের কৃষ্ণপক্ষের সাবিত্রী চতুর্দশী তিথিতে স্ত্রীরা স্বামীদের দীর্ঘজীবন কামনা করে যমের আরাধনা করতেন। এই লোকাচারটির সূত্র ধরেই কলকাতার বাবু সংস্কৃতিতে নাকি জামাই ষষ্ঠীর অনুপ্রবেশ। বাল্যবিবাহ,সতীদাহ ইত্যাদি ঘটনার অনুষঙ্গ ধরেই হয়তো এক সময় খুব স্বাভাবিক ভাবেই শাশুড়িমাতা জামাইবাবাজীবনের দীর্ঘজীবন কামনা করতেন।
জামাইষষ্ঠীর দিন-ক্ষণ-
২০২৩ সালের ২৫ মে বৃহস্পতিবার, বাংলার ১০ জ্যৈষ্ঠ। ষষ্ঠী শুরু হবে ২৫ মে রাত ৩ টে বেজে ২৮ মিনিটে এবং ষষ্ঠী তিথি শেষ হবে ২৬ মে শুক্রবার বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে।