উত্তরপ্রদেশের গৌরবময় অতীত ও উপলব্ধি উদযাপনের উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ দিবসের আড়ম্বরপূর্ণ শুভ সূচনা হল লখনউয়ের অযোধ্যা শিল্পগ্রামে। ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যুব উদ্যোক্তা বিকাশ অভিযান (সিএম যুব) এর ই-পোর্টাল উদ্বোধন করা হয় এবং ২৫,০০০ যুব উদ্যোক্তাদের তাদের উদ্যোগ স্থাপনের জন্য ঋণ ও অনুমোদন পত্র বিতরণ করা হয়। সাথে সাথে প্রদেশের ছয়জনকে উত্তরপ্রদেশ গৌরব সম্মান প্রদান করা হয়। এই উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, উত্তরপ্রদেশ দিবস রাজ্যের সমৃদ্ধি ও গৌরবের উৎসব।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উপরাষ্ট্রপতি কে স্বাগত জানিয়ে উত্তরপ্রদেশ স্থাপনা দিবসে প্রদেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, এই বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউপিতে মহাকুম্ভের আয়োজন হচ্ছে। গত ১০ দিনে দেশ-বিদেশ থেকে আগতরা ত্রিবেণী সঙ্গমে পূজনীয় সন্তদের সান্নিধ্যে গঙ্গা স্নান করে পূণ্য অর্জন করেছেন। এই শ্রদ্ধালুরা এখান থেকে দেশজুড়ে ঐক্যের বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, এই বছর বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বে রচিত সংবিধান ২৬ নভেম্বর ১৯৫০ সালে সংবিধান সভায় সমর্পণ করা হয়েছিল। এই সংবিধান প্রয়োগের ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সাথে সাথে ২৪ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে উত্তরপ্রদেশের স্থাপনা হয়েছিল। এই দিনটি আমাদের জন্য গৌরবময় অতীতের প্রতীক।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে বলেন, ১৭৭৫ থেকে ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চল ফোর্ট উইলিয়াম (বঙ্গ) এর অধীনে ছিল। ১৮৩৪ সালে এটিকে বঙ্গ থেকে পৃথক করে আগ্রা প্রেসিডেন্সি তৈরি করা হয় এবং ১৮৩৬ সালে এর নাম হয় নর্থ ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সেস। ১৯০২ সালে এর নাম হয় 'নর্থ ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সেস এন্ড অযোধ্যা' এবং ১৯৩৭ সালে 'ইউনাইটেড প্রভিন্সেস'। অবশেষে ২৪ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে এটি 'উত্তরপ্রদেশ' নামে পরিচিত হয়। আজ এই প্রদেশ অসীম সম্ভাবনার প্রতীক।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ২০১৮ সালে তৎকালীন রাজ্যপাল রাম নাইকজীর মার্গদর্শনে প্রথম উত্তরপ্রদেশ দিবস পালিত হয়। আজ এই আয়োজন তার ৭ম বছরে প্রবেশ করছে। উত্তরপ্রদেশ এই সময়ে অনেক যোজনার শুরু করেছে। প্রথম স্থাপনা দিবসে এক জেলা এক পণ্য (ওডিওপি) যোজনা প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় স্থাপনা দিবসে বিশ্বকর্মা শ্রম সম্মান যোজনা শুরু করা হয়। বিভিন্ন বছরে অন্যান্য যোজনা ও শুরু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, আজকের এই উপলক্ষ্যে মহামান্য উপরাষ্ট্রপতির করকমলে মুখ্যমন্ত্রী যুব উদ্যোক্তা বিকাশ অভিযানের শুভ সূচনা হচ্ছে। এই যোজনা অনুযায়ী প্রতিবছর ১ লক্ষ যুবককে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ মিলবে। ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুবকদের বিনা সুদে ঋণ প্রদান করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। এই যোজনা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২৭,৫০০ আবেদন পাওয়া গেছে, এবং ২৫৪ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন, ২০১৬-১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের অর্থনীতি ছিল ১২ লক্ষ কোটি টাকা, যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ লক্ষ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। আগামী ৪ বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দর্শন অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশ এক ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য ছাড়াই সরকারের যোজনা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। গ্রাম, গরিব, কৃষক, যুবক এবং মহিলা প্রত্যেকের বিকাশের জন্য উত্তরপ্রদেশে যোজনা চালু হচ্ছে। সকল জনজাতি বন্ধুদের কাছে শতভাগ পরিপূর্ণতার লক্ষ্য পূরণে সফলতা পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা, বিনিয়োগ, পর্যটন এবং পরিকাঠামো উন্নত করে উত্তরপ্রদেশ আজ দেশের বিকাশের ইঞ্জিন হিসেবে উঠে আসছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'শূন্য দারিদ্র্য' লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রদেশে সমীক্ষা চলছে। আমাদের প্রচেষ্টা হল আগামী বছর যখন আমরা উত্তরপ্রদেশ দিবস পালন করব, তখন প্রতিটি গরিবের মাথার উপর ছাদ থাকবে, জমির পাট্টা থাকবে, আয়ুষ্মান কার্ড এবং পেনশন ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, আমরা জাতি, ভাষা বা অঞ্চলের বৈষম্যের উর্ধ্বে উঠে প্রতিটি গরিব এবং বঞ্চিতকে তাদের অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, উত্তরপ্রদেশ তার আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে দেশের সেরা পর্যটন গন্তব্য হিসেবে উঠে আসছে। আইনশৃঙ্খলা উন্নত করে প্রদেশকে বিনিয়োগের উত্তম গন্তব্য বানানো হয়েছে। এটি দেশের খাদ্য ভাণ্ডার হয়ে উঠেছে। এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর এবং মেট্রো নেটওয়ার্কের মামলা এটি দেশের অগ্রগণ্য রাজ্যগুলির মধ্যে একটি। তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশ দিবস রাজ্যের ঐতিহাসিক অতীত, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উপলব্ধি উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। প্রদেশ দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে। সরকারের যোজনা এবং প্রচেষ্টা উত্তরপ্রদেশকে 'উদ্যোক্তাদের প্রদেশ' এবং দেশের বিকাশের প্রধান কেন্দ্র বানানোর দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুধু প্রদেশবাসীদের তাদের গৌরবময় অতীত নিয়ে গর্ব করার সুযোগ দেবে না, ভবিষ্যতের জন্য নতুন স্বপ্ন ও আশার বার্তা ও দেবে। উত্তরপ্রদেশ দিবস উপলক্ষ্যে ৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে উত্তরপ্রদেশ গৌরব সম্মান প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী রাকেশ সচান, জয়বীর সিং, রাজ্যসভা সাংসদ দীনেশ শর্মা, সঞ্জয় সেঠ, বিধায়ক রাজেশ্বর সিং, জয়দেবী, যোগেশ শুক্লা, মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।