এআই-এর দৌড়ে ভারতীয় চমক: উন্নত দেশগুলিকে ছাপিয়ে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে ভারত

Published : Dec 16, 2025, 09:59 PM IST
Artificial Intelligence

সংক্ষিপ্ত

গোটা বিশ্ব যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধার দৌড়ে শামিল, তখন ভারতের জন্য এক অত্যন্ত গর্বের খবর। মার্কিন মুলুকের বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এআই প্রতিযোগিতার নিরিখে ভারত বিশ্বে তৃতীয় স্থান দখল করেছে।

এক সময় প্রযুক্তির মানচিত্রে ভারতের নাম উঠত মূলত আউটসোর্সিং কিংবা আইটি পরিষেবার প্রসঙ্গে। বিশ্ববাজারে ভারত মানেই সফটওয়্যার সার্ভিস বা ব্যাকএন্ড সাপোর্ট—এই ধারণাই ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই পরিচয় এখন দ্রুত বদলাচ্ছে। আজ ভারত আর শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারকারী দেশ নয়, বরং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও বিশ্বমঞ্চে নিজের জায়গা তৈরি করছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, এআই উন্নয়ন ও প্রভাবের নিরিখে বিশ্বে ভারত এখন তৃতীয় স্থানে।

বিশ্ব অর্থনীতির চালচিত্র বদলে দিচ্ছে এই কৃত্রিম মেধাই।

যন্ত্রকে মানুষের মতো শেখানোর এই প্রযুক্তি এখন আর গবেষণাগারের চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় জালিয়াতি রোধ, সামরিক কৌশল নির্ধারণ থেকে শুরু করে সংবাদ তৈরি ও বিশ্লেষণ—প্রায় সর্বত্রই এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। এমন এক সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের অবস্থান উঠে আসা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

এই মূল্যায়নের নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা প্রকল্প। তারা তৈরি করেছে ‘গ্লোবাল এআই ভাইব্রেন্সি টুল’, যেখানে কোনও দেশের এআই সক্ষমতাকে বিচার করা হয়েছে একাধিক সূচকের ভিত্তিতে। শুধু গবেষণাপত্রের সংখ্যা নয়, এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদের প্রাপ্যতা, সরকারি নীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং বাস্তব অর্থনীতিতে এআই-এর প্রয়োগ।

স্ট্যানফোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, এআই ভাইব্রেন্সি স্কোরে শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—যাদের স্কোর প্রায় ৭৯।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা চিনের স্কোর প্রায় ৩৭। আর ভারত পেয়েছে ২১-এর বেশি স্কোর, যা একাধিক উন্নত দেশকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এই তালিকায় ভারত দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো প্রযুক্তিতে শক্তিশালী দেশগুলির থেকেও এগিয়ে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল—এই শীর্ষ তিনে জায়গা পাওয়া একমাত্র নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ ভারতই।

এই সাফল্যের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে ভারতের মানবসম্পদ। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তি-স্নাতক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন, যাঁদের বড় অংশ এখন এআই ও ডেটা সায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত। দেশীয় স্টার্টআপ থেকে শুরু করে বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা—সব জায়গাতেই ভারতীয় প্রতিভার উপস্থিতি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। স্ট্যানফোর্ডের বিশ্লেষণে ‘ট্যালেন্ট অ্যাভেলেবিলিটি’ বিভাগে ভারতের অবস্থান প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে।

এছাড়া গত কয়েক বছরে ভারতে এআই গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার, স্টার্টআপ-বান্ধব নীতি এবং স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা ও প্রশাসনে এআই ব্যবহারের পরীক্ষামূলক প্রকল্প ভারতের স্কোর বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

তবে এই উত্থানের পাশাপাশি একটি সতর্কতার কথাও উঠে এসেছে রিপোর্টে। স্ট্যানফোর্ডের মতে, এআই প্রযুক্তির সুফল যদি সীমিত কয়েকটি দেশ বা গোষ্ঠীর মধ্যেই কেন্দ্রীভূত থাকে, তাহলে বৈশ্বিক স্তরে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য আরও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে, ভারতের এই অর্জন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এক সময় যেখানে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারত ছিল অনুসরণকারী, আজ সেখানে সে ধীরে ধীরে নেতৃত্বের দাবিদার হয়ে উঠছে। কৃত্রিম মেধার বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ভারত যে আর কেবল দর্শকের ভূমিকায় নেই, বরং সক্রিয় প্রতিযোগী—এই র‍্যাঙ্কিং সেটাই স্পষ্ট করে দিল।

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Budget Friendly Smartphones: মাত্র ১০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা ক্যামেরা ফোন? রইল সেরা পাঁচের তালিকা
Amazon Kindle: বইপ্রেমীদের জন্য জ্যাকপট! পড়ার অভিজ্ঞতা বদলে দেবে অ্যামাজন?