ঈস্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। তাও আবার অপঘাতে মৃত্যুর জন্য। না কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়, নিজেদের জামাইয়ের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে এই পথেই হাঁটলেন বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়ির বংশের বর্তমান সদস্যরা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় তাঁর জন্মস্থান পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে ধিক্কার মিছিল বেরিয়েছিল, শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সেখানকার মানুষ। তার থেকেও একধাপ এগিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণার ক্ষীরপাইতে বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়িরর তরফের লোকজনরা মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে তাঁর শ্রাদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।
কিন্তু মূর্তি ভাঙার সঙ্গে শ্রাদ্ধের কী সম্পর্ক? বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়ির পরিবারের অন্যতম প্রবীণ সদস্য গীতারানি ভট্টাচার্যের কথায়, "আমাদের কাছে তিনি চির অমর হয়ে থাকবেন, তাঁর মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা আমরা মানতে পারছি না। তাঁর আত্মার শান্তি কামনার জন্যই আমরা তাই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।"
যেমন ভাবা তেমন কাজ। মঙ্গলবার রাতে বিদ্যাসাগেরর মূর্তি ভাঙা হয় কলকাতায়। তার চারদিনের মাথায় ক্ষীরপাইয়ের কাছারিপাড়ায় ভট্টাচার্য পরিবারে শুক্রবার সকাল থেকে রীতিমতো পুরোহিত ডেকে মন্ত্রোচ্চারণ করে অপঘাতে মূত্যুর জন্য পারলৌকিক কাজ চলল বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে। সঙ্গে ছিল গীতা পাঠের ব্যবস্থাও। পরিবারের আর এক মহিলা সদস্য সাধনা ভট্টাচার্য জানালেন, নিয়ম মেনে তাঁরা উপোসও করেছেন। গোটা ভট্টাচার্য পরিবার জুড়ে যেন স্বজন হারানোর বেদনা।
১৮৩৪ সালে দীনমণি দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের। তাঁদের একমাত্র সন্তান নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সারতে সারতেই বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়ির পরিবারের আর এক সদস্য বললেন, "আমাদের পরিবারের বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বিয়ে হয়েছিল। তাই আমরা খুব গর্ব অনুভব করি। কিন্তু সেই মনীষীর প্রতীকৃতি ভেঙে দেওয়ায় আমরা খুব দুঃখ পেয়েছি। তাই তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় আমরা এই নিয়ম মেনে এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, গীতা পাঠ করছি। আমরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের যেন যুগে যুগে এই বাংলায়, এই দেশে এবং এই বিশ্বে আবির্ভাব হয়।"