ঘাসফুল ছেড়ে পদ্ম ফুল ধরার পর থেকে পুরনো দলের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর সপ্তমে নিয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার 'তোলাবাজ ভাইপো' ও 'মিনি পাকিস্তান ওয়ালা মন্ত্রী' আক্রমণ রীতিমত আলোড়ন তৈরি করেছে বঙ্গ রাজনীতিতে। বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ২০০-র বেশি ও দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়্গ্রামে মোট ৩৫টি আসনই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহকে উপহার দেবেন বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনকী হরিশ চাটার্জি স্ট্রীটেও পদ্ম ফোটানোর হুঙ্কার দিতে দুবার ভাবেননি দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা।
শুভেন্দুর আক্রমণ, তাকে শাসক দলের পাল্টা আক্রমণ, এই গরমা গরম পরিস্থিতি শীতের আমেজে ভালোই উপভোগ করছিল রাজ্যবাসী। কিন্তু হঠাৎ করে শেষ কয়েকটি মিটিংয়ে শুভেন্দুর গলায় শোনা গিয়েছে সিপিএমের প্রশংসা। সিপিএমের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, ভূমি সংস্কার থেকে শুরু করে প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষা করানো, কী কী ভালো কাজ করেছে বামেরা সেই প্রশংসাও করেছেন বিজেপি নেতা। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রশংসাও শোনা গিয়েছে তার গলায়। অবশ্য লক্ষ্ণণ শেঠ, অনিল বিশ্বাস, বিনয় কোঙারদের সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু বামেদের প্রতি শুভেন্দুর প্রীতি দেখে অবাক হচ্ছিলেন অনেকেই।
এত দূর তো ঠিক ছিল। অবশেষে কেনও বামেদের প্রশংসা করছিলেন শুভেন্দু অধিকারী তার উত্তর মিলল শনিবার চন্দ্রোকোণায় বিজেপির সভা থেকে। সেখানে বক্তব্য রাখতে উঠে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তৃণমূল কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যা থেকে 'তোলাবাজ ভাইপো', নিজের সব অস্ত্রেই একবার করে শান দিয়েছেন বিজেপি নেতা। একইসঙ্গে এদিনও বামেদের কিছু কাজের প্রশংসা করার পাশাপাশা শুভেন্দু অধিকারী বাম কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন,'লাল ঝাণ্ডা কাঁধে সিপিএমের মিছিলে যাচ্ছেন যান। তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ভোটটা বিজেপিকেই দেবেন। কারণ রাজ্যে আগামি দিনে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, পুরসভা নির্বাচনে যদি নমিনেশন করতে চান, তাহলে তণমূলকে সরিয়ে বিজেপিতে আনতেই হবে। বিজেপি রাজ্যে ভোটের যথার্থ পরিবেশ তৈরি করবে।'
শুভেন্দু অধিকারীর মুখে এহেন বক্তব্য শুনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি 'দাদার অনুগামীদের' উপর ভরসা হারাচ্ছেন খোদ 'দাদাই'? না বিজেপির নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক ও তৃণমূলে ভাঙন ধরানোর পরও নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না শুভেন্দু অধিকারী। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বামেদের রক্তক্ষয় অব্যাহত। ভোট কমতে কমতে গত লোকসভা নির্বাচনে তা ৭ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এবার কি নির্বাচনী বৈতরনী পার করতে সেই ভোটও দরকার পদ্ম শিবিরের। তাহলে কোন ভরসায় 'ইসবার দুশো পার' স্লোগান তুলছেন বিজেপি নেতৃত্ব তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তবে উত্তর জানতে আমাদের সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত।