যেখান থেকে পুরুলিয়ায় শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই খড়গপুরে ভোট প্রচারে এসে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরহকারকে তুলোধনা করলেন প্রধানমন্ত্রী ততা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে আসল পরিবর্তন ও উন্নয়নের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে নাম না করে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন নমো। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প থেকে শুরু করে দুর্নীতি, তোলাবাজি সব ইস্যুতেই আক্রমণ শানান নরেন্দ্র মোদী।
'বাংলায় উন্নয়নের পথে বাধা দিদি'-
বিগত দশ বছরে বাংলায় কোনও উন্নয়ন হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন,'বাংলায় উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দিদি। আপনারা বিশ্বাস করেছেন, উনি আপনাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আপনাদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন। ১০ বছরে বাংলাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আপনি লুঠতরাজের সরকার চালিয়েছেন। ১০ বছর ধরে শুধু দুর্নীতি দিয়েছেন, কুশাসন দিয়েছেন।'
'বাংলার উন্নয়ন ডাউন হয়ে গিয়েছে'-
শুক্রবার রাতে কিছু সময়ের জন্য বসে গিয়েছিল ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম। যার ফলে হই চই পড়ে গিয়েছিল চারিদিকে। সেই বিষয় তুলে ধরেও মমতা সরকারকে তোপ দেগেছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন,গতকাল রাতে ৫০-৫৫ মিনিটের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ডাউন হয়ে গিয়েছিল। মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। বাংলায় তো ৫০-৫৫ ধরে উন্নতিই আটকে রয়েছে। মানুষের বিকাশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, চাকরি সব কিছুই ডাউন হয়ে গিয়েছে।
'দিদির পাঠশাল নির্মমতার পাঠশালা'-
এছাড়া কাটমানি, তোলাবাজি, তুষ্টিকরণ ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে নতুন শব্দ ব্যবহার করেন মোদী। বলেন,'দিদির পাঠশাল নির্মমতার পাঠশালা'। এছাড়া প্রধামনন্ত্রী বলেন,'আপনাদের অস্থিরতা বুঝি। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূলকে বছরের পর বছর ধরে সহ্য করে আসছেন। দিদি তুষ্টিকরণের রাজনীতি করে এসেছেন বরাবর। বাংলার যুবসমাজের কাছ থেকে ১০ বছর কেড়ে দিয়েছেন দিদি। দিদির দল নির্মমতার পাঠশালা। সিলেবাস হচ্ছে তোলাবাজি। দিদির পাঠশালায় সিলেবাস কাটমানি। দিদির পাঠশালায় সিলেবাস সিন্ডিকেট। দিদির পাঠশালায় উৎপীড়ন এবং অরাজকতার ট্রেনিং দেওয়া হয়।'
'খেলা হবে না, খেলা শেষ হয়ে যাবে, উন্নয়ন শুরু হবে'-
বাংলার যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা থেকে শুরু করে, 'খেলা হবে' স্লোগান সব কিছুকেই কটাক্ষ করেন নরেন্দ্র মোদী। বলেন,'যুবসমাজের উন্নতিতেও আপত্তি রয়েছে দিদির। তাই নয়া শিক্ষা নীতি চালু করতে চাইছেন না। যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছেন দিদি। বাংলার যুবসমাজ, মা-বোন, দরিদ্র, দলিতদের আশ্বাস দিচ্ছি, দিদিকে বাংলার যুবসমাজের ভবিষ্যতের সঙ্গে খেলতে দেব না। বলে বেড়াচ্ছেন খেলা হবে। কিন্তু গোটা বাংলা বলছে, খেলা শেষ হবে। উন্নয়ন শুরু হবে।'
'বাংলায় চলে ভাইপো উইন্ডো'-
খগড়পুর থেকে নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কয়লা, বালি, আমফান, রেশন দুর্নীতি সহ একাধিক বিষয় তুলে ধরেন তিনি। বলেছেন,'বাকি রাজ্যে উন্নয়নে সিঙ্গল উইন্ডো, বাংলায় চলে ভাইপো উইন্ডো। সুবর্ণরেখা এবং কংসাবদী নদীতে বেআইনি খননের তার কোথায় গিয়ে জুড়েছে, তা সকলেই জানে। বিজেপি বাংলায় ক্ষমতা এলে এর বিচার হবে। বাংলায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। আর এই সব বিষয়ে যার দোষী তাদের আইনের পথে সাজা দেওয়া হবে।'
'এবার দিদিকে গণতন্ত্রকে পদদলিত করতে দেব না'-
রাজ্যে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের হিংসার কথা এদিন নরেন্দ্র মোদী নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। মোদী বলেন,'পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে ভাবে আপনাদের ভোটাধিকারকে পিষে দিয়েছিলেন, তা গোটা দুনিয়া দেখেছে। আমি কথা দিচ্ছি দিদিকে গণতন্ত্রকে পদদলিত করতে দেব না। পুলিশ-প্রশাসনকেও গণতন্ত্রকে বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। নির্ভয়ে ভোট দিন আপনারা। একসঙগে রুখে দাঁড়ান অরাজকতার বিরুদ্ধে।'
এছাড়াও খড়গপুরে বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে বিপূল ভোটে জয় যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন মোদী। রাজ্যে পরিবর্তন যে অবশ্যম্ভাবী সেই কথাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সরকার রাজ্যের সমস্ত প্রকার উন্নয়ন করবে বলেও জানিয়েছেন নমো। ফলে একের পর এক ভোট প্রচারে যেভাবে ঝড় তুলছেন নরেন্দ্র মোদী, তারপ্রভা ভোট বাক্সে কতটা পড়ে তার জন্য অপেক্ষা ২ মে-র।