একদিকে যেখানে পরিষেবা দিতে দুয়ারে দুয়ারে পৌছে যাচ্ছে মমতা বন্দোপাধ্য়ায়ের সরকার। একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান। তৃণমূল কংগ্রেস দলের তরফে শুরু হয়ে গিয়েছে নির্বাচনী ইস্তেহার তৈরির কাজও। ঠিক একইসঙ্গে শাসক দলের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়াচ্ছে দলের অন্দরে বেসুরোদের কার্যকলাপ। জেলায় জেলায় দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন বহু তৃণমূল নেতা-নেত্রী। এবার কী সেই তালিকায় নাম লেখালেন শতাব্দী রায়। কারণ একটি ফেসবুক পোস্ট ফোকাসে এনেছে শতাব্দী রায়কে।
তৃণমূল বিরোধীরা দাবি করছেন শতাব্দীর নামে হওয়া এই ফেসবুক পোস্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কাছে এক নতুন বিড়ম্বনা। তৃণমূলের ৩ বারের সাংসদ শতাব্দী রায়। বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী বহুবার দলের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। বরাবর তার অভিযোগ ছিল বীরভূমের জেলা নেতৃত্বের একাংশের চক্রান্তে তিনি সেভাবে কোনও কাজ করতে পারছেন না। এর জেরে সাধারণ মানুষ তার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারে না বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন। তবে ভোটের মুখে তৃণমূলের অন্দর মহলে যে নেতা নেত্রীরা বেসুরো গাইছেন অথবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন- সেই সব দলে কিন্তু শতাব্দী রায়ের নাম কখনই ছিল না।
পৌষ সংক্রান্তির দিনে তাই শতাব্দীর নামে হওয়া একটি পোস্ট যেন আরও এক বিস্ফোরণ ঘটালো বঙ্গ রাজনীতিতে। শতাব্দী রায় ফ্যানস ক্লাবে নামে একটি ফেসবুক পেজে এই ভাইরাল পোস্টটি করা হয়েছে। পোস্টে যে লেখা দেওয়া হয়েছে তার নীচে শতাব্দী রায়ের নাম লেখা। যদিও এই পোস্টের কোথাও শতাব্দী রায়ের কোনও সাক্ষর নেই। সুতরাং নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছেন না আদৌ এই পোস্টের সঙ্গে শতাব্দী রায়ের নিজস্ব সম্পর্ক কতটা। যদিও পোস্টে যে লেখাগুলি দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে অতীতে শতাব্দী রায় যে একাধিক ইস্যুতে দলের একাংসের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তার অনেকটাই মিল রয়েছে। শতাব্দী রায় ফ্যান ক্লাবের ফেসবুক পেজে করা এই পোস্টে বলা হয়েছে,'যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিই, ১৬ জানুয়ারি নেব। শনিবার দুপুর ২টোয় জানাব। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আমাকে কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না কেন ?’ কেউ কেউ চায় না আমি আপনাদের কাছে যাই। বহু কর্মসূচির খবর আমাকে দেওয়া হয় না। না জানলে আমি যাব কী করে? এ নিয়ে আমারও মানসিক কষ্ট হয়। গত দশ বছরে আমি আমার বাড়ির থেকে বেশি সময় আপনাদের কাছে বা আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করতে কাটিয়েছি, আপ্রাণ চেষ্টা করেছি কাজ করার, এটা শত্রুরাও স্বীকার করে। তাই এই নতুন বছরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি যাতে আপনাদের সঙ্গে পুরোপুরি থাকতে পারি।'
শতাব্দী রায়ের এই পোস্টের বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হল তিনি জানান, এই বিষয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। দলীয় স্তরে আলোচনা করে, শতাব্দীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হবে। জানুয়ারির মাসের শুরুতেই বিজেপি নেতৃত্ব হুঁশিয়ারী দিয়েছিল, জানুয়ারি মাসের মধ্যে তৃণমূলে মহাভাঙন ধরবে। একাধিক সাংসদ, বিধায়ক, নেতা বিজেপিতে যোগ দেবেন। শতাব্দী রায়ের ফ্যান ক্লাবের এই পোস্ট কি সেই 'মহাভাঙনের' সূত্রপাত?