শয্যা অমিল, তিনটি সরকারি হাসপাতালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু যুবকের

  • ছোটবেলায় হিমোফিলিয়া আক্রান্ত হন বীরভূমের মুরারই-এর যুবক রাহুল শেখ
  • রক্তক্ষরণের ভয়ে কার্যত গৃহবন্দি থাকতে হত তাঁকে
  • মুত্রদ্বার থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় রাহুলকে কলকাতায় নিয়ে আসেন পরিবারের লোকেরা
  • শয্যা না থাকায় রোগীকে ফিরিয়ে দেয় শহরের তিনটি সরকারি হাসপাতাল

Asianet News Bangla | Published : Oct 30, 2019 8:20 AM IST / Updated: Oct 30 2019, 01:52 PM IST

এসএসকেএম, এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।  শহরের তিন-তিনটি সরকারি হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু কোনও হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করা যায়নি। বলা ভালো, শয্যা না থাকায় ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষপর্যন্ত কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন হিমোফিলিয়া আক্রান্ত এক যুবক। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের মুরারই ২ নম্বর ব্লকের কাঠিয়া গ্রামে। 

কোনও কারণে শরীর থেকে একবার রক্তক্ষরণ শুরু হলে, আর রক্ষে নেই! সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে রোগীর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।  গৃহবন্দি হয়েই দিন কাটত মুরারই ২ নম্বর ব্লকে নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে কাঠিয়া গ্রামের যুবক রাহুল শেখের। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, ছোটবেলায় হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হন রাহুল। অনেক চিকিৎসা করিয়ে তাঁকে আর সুস্থ করা যায়নি। সর্বক্ষণই ছেলের উপর নজর রাখতেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল  না। জানা গিয়েছে, গত ২৪ অক্টোরক হঠাৎ-ই রাহুলের মূত্রদ্বার থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।  তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে একদিন ভর্তি ছিলেন ওই যুবক। এরপর আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। কিন্তু রোগীকে একদিন ভর্তি রাখার পর আর ঝুঁকি নিতে চাননি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাহুল শেখকে রেফার করে দেওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।

পরিবারের লোকেরা জানিয়েছে, যেদিন এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকরা, সেদিন রাহুলকে নিয়ে কলকাতা রওনা হয়ে যান তাঁরা।  কিন্তু শয্যা না থাকায় রাহুলকে ভর্তি নেয়নি এসএসকেএম হাসপাতালকর্তৃপক্ষ। এরপর ওই যুবককে নিয়ে প্রথমে এনআরএস ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু ওই দুটি সরকারি হাসপাতালের অবস্থা তথৈবচ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, একটি শয্যা খালি নেই, রোগীকে ভর্তি করা যাবে না। কী আর করবেন! রাতভর ঘোরাঘুরির পর গুরুতর অসুস্থ রাহুল শেখকে নিয়ে বীরভূমের মুরারই-এ ফিরে আসেন পরিবারের লোকেরা।   শেষপর্যন্ত বাড়িতেই কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যান হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রাহুল শেখ।  পরিবারের লোকেদের আক্ষেপ, কলকাতার সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসাটুকুও হত, তাহলে হয়তো ওই যুবককে এভাবে মরতে হত না। আর কাউকে যেন এভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে না হয়, সেদিকে সরকারকে নজর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন মৃত রাহুল শেখের পরিবারের লোকেরা।


 

Share this article
click me!