জরাজীর্ণ দশা হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পাসের। অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় জল।
বেহাল দশা পুলিশ ব্যারাকের। একদিনের বৃষ্টিতে জল জমে থানা চত্বরে। বৃষ্টি নামলেই জলের মধ্যে খাট পেতে শুয়ে থাকেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পুলিশকর্মীরা। এমনই জরাজীর্ণ দশা (Dilapidated condition) হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পাসের (Harishchandrapur police campus)। অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় জল। আর তার মধ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে এসে জলের মধ্যে বিছানা পাতেন পুলিশকর্মীরা। এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশ ব্যারাকে।
করোনা কালে যারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সুরক্ষায় সামনের সারিতে লড়াই করে যাচ্ছেন তাদেরই থাকার জায়গার ঠিক নেই। এই করোনা আবহে পরিবার নিয়ে তাদের থাকতে হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। শান্তিতে হচ্ছে না রাতের ঘুম টুকুও। বৃষ্টি হলে জল জমে যাচ্ছে সমগ্র থানায়। থানার চত্বর দেখলে মনে হচ্ছে ছোট-খাটো জলাশয়। পুলিশ ব্যারাকে ঢুকে যাচ্ছে জল। ফলে বাড়ছে সাপ, পোকা, মাকড়ের অত্যাচার। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ব্যারাকে থাকা পুলিশকর্মীরা। বেহাল অবস্থা নিকাশি ব্যবস্থার। তেমনি চিত্র ধরা পড়ছে মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর থানায়।
এই হরিশ্চন্দ্রপুর থানা যেই জায়গায় অবস্থান করেছে সেই জায়গা একটু নিচু। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জমে যাচ্ছে জল। এদিকে থানার দুই দিকে রয়েছে পুকুর। বর্ষাকালে যে পুকুরের জলও ঢুকে পড়ছে থানায়। জমা জলে থানা চত্বরে তৈরি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম- পঞ্চায়েত থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে ড্রেন নিকাশি ব্যবস্থা করা হলেও সঠিক পরিকল্পনায় তৈরি হয়নি ড্রেন। ফলে বেহাল হয়ে গেছে সমগ্র থানা চত্বরে নিকাশি ব্যবস্থা। পুলিশ ব্যারাকে ঢুকে গেছে জল। যার ফলে জরাজীর্ণ হয়ে যাচ্ছে ব্যারাকের ঘরগুলোর পরিস্থিতি। দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে চুন,বালি। পাশাপাশি দেওয়ালে উঠেছে বড় বড় গাছ, বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ব্যারাক।
জল দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে সাপ, ব্যাং, পোকামাকড়। সারাদিন ডিউটি করার পর দিনের শেষে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন না পুলিশকর্মীরা। অনেকেই এখানে পরিবার নিয়ে থাকেন। ফলে প্রচন্ড সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় একটি মাত্র জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। সেই ট্যাংক থেকে সমগ্র থানা ক্যাম্পাসে জল সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ওই ট্যাংকের অবস্থা খুব খারাপ। পুলিশকর্মীরা ওই ট্যাংক অবিলম্বে সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন। পুলিশকর্মীরা অনুরোধ জানাচ্ছেন প্রশাসন যাতে এই বিষয়ে নজর দেয়।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কনস্টেবল মহম্মদ রাজিউল বলেন, "আমি প্রায় দুই বছর ধরে এই থানায় রয়েছি। একটু বৃষ্টিতে জল জমে যায়। কারণ জল নিকাশের ব্যবস্থা নেই। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে নর্দমা করা হলো তা অনেকটা উঁচুতে হয়েছে। ফলে পাস হচ্ছে না জল। আমাদের ব্যারাকের ঘরে জল ঢুকে যাচ্ছে। অত্যাচার হচ্ছে সাপ পোকা-মাকড়ের। থাকতে প্রচন্ড সমস্যা হচ্ছে।"
থানার বাইরে লেখালেখির কাজ করেন নাজির হোসেন। তিনি বলেন, "হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অবস্থান ঢালু জায়গায়। কিন্তু যে নর্দমা তৈরি হয়েছে তা অনেকটা উঁচুতে। ফলে বৃষ্টি হলে বৃষ্টির বাড়তি জল বের হতে পারে না। যার জন্য সমগ্র থানা চত্বরে একটা জলাময় অবস্থা। জল ঢুকে যাচ্ছে ব্যারাক গুলোতে। পুলিশদের অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে দিন কাটাতে হচ্ছে।"
স্থানীয় বাসিন্দা চন্দ্র নাথ রায় বলেন, "থানার দুই দিকে পুকুর। সেই পুকুরের জল বর্ষার সময় ঢুকে যাচ্ছে থানায়। নিকাশি ব্যবস্থা সঠিক নেয়। নর্দমা তৈরিতে দুর্নীতি হয়েছে। সঠিকভাবে তৈরি হয়নি নর্দমা। ফলে জল নিকাশি হচ্ছে না ঠিক করে। মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।"
মালদা জেলা পুলিশ সুপার অলক রাজোরিয়া বলেন, "জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ ব্যারাক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানাতেও খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।পুলিশকর্মীরা দিনরাত এক করে আমাদের নিরাপত্তা দেয়। করোনা কালে লড়াই করছে সামনের সারি থেকে। সেখানে যদি তাদের থাকার জায়গাটায় অস্বাস্থ্যকর হয় তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রশাসনের উচিত দ্রুত নজর দেওয়া।