নেই সেই রাজবৈভব,নেই অস্ত্রের ঝনঝনানি, রাতে জ্বলে না আর ঝাড়বাতি,শোনা যায় না সানাই এর সুর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কালের গভীরে সব বিলিন হয়ে গেছে। তবে মহিষাদল রাজ পরিবারের ২৪২ বছরের প্রাচীন পুজো আজও রীতিনীতি মেনে হয়ে আসছে। গড়কমলপুর ও রংগিবসান এই দুটি গ্রামকে নিয়ে একসময় গড়ে উঠেছিল মহিষাদল পরগনা। সেই জমিদার বংশের আদি পুরুষ ছিলেন রাজা জনার্দন উপাধ্যায়। জনার্দনের ষষ্ঠ পুরুষ আনন্দলাল উপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর ১৭৬৯ সালে তাঁর ধর্মপরায়ণা পত্নী রানি জানকী সিংহাসনে বসেন। রানী জানকী ১৭৭৮ সালে রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই থেকেই রীতিনীতি মেনেই রাজ পরিবারের সদস্যরা পুজো করে আসছে।
আজও সেই আটচালার সামনে দূর্গা মন্ডপে একচালার প্রতিমা পুজিতা হন। রানী জানকী পুজোর প্রচলন শুরু করলেও ১৮০৯ সালে রানি ইন্দ্রাণীর আমল থেকেই মহা সমারোহে এই পুজো হচ্ছে । মহিষাদল রাজ পরিবারের প্রবীণ সদস্য শংকর প্রসাদ গর্গ জানান, এই পারিবারিক পুজো প্রায় ২৪২ বছরের পুরনো । আগের মত আড়ম্বর এখন আর নেই। কুল দেবতা গোপাল জীউ, তাই বৈষ্ণব মতে এখানে পুজো হয়। রাজ বাড়িতে প্রতিপদ থেকেই ঘট ওঠে। আগে নিয়ম ছিল তিথি অনুযায়ী চালের ভোগ দেওয়া হবে, যেমন প্রতিপদে এক মণ, দ্বিতীয়াতে দু মণ, এই ভাবে দশমীতে দশ মণ চালের ভোগ দেওয়া হত। কিন্তু বর্তমানে আর তা হয়না। তবে নিয়ম মেনে অষ্টমীতে আট মণ চালের ভোগটা হয়।
আগে দুর্গাপুজোর সময় রাজ বাড়ির দূর্গা দালানে যাত্রা নাটকের আসর বসত। রানী মা ও রাজ পরিবারের মহিলারা চিকের আড়ালে বসে যাত্রা নাটক দেখতেন। এখন ছোটখাটো অনুষ্ঠান হয়। চিকের আড়াল না হলেও মহিলাদের জন্য এখনে আলাদা করে ঘেরা জায়গায় বসার ব্যাবস্থা রয়েছে । আগে সন্ধি পুজোতে কামান দাগা হতো তবে এখন আর হয়না শব্দ দূষনের আইনের নিষেধাজ্ঞা থাকার ফলে।
আগে অষ্টমী ও সন্ধি পুজতে রাজবাড়ির মহিলারা আসতেনন পুজো দিতে , সেই সময় অন্য কেউ দুর্গা দালানে প্রবেশ করত পারতেন না। এখন অবশ্য সেই বিধি নিষেধ আর নেই। কর্মসূত্রে পরিবারের বেশির সদস্যি এখন বাইরে থাকেন। তবে পুজোর সময় সকলে চলে আসেন মহিষাদলে। আগে রাজ বাড়ির দূর্গা প্রতিমা বিসর্জন হত গেঁওখালির রূপনারায়ণ নদে। এখন বাড়ির সাহেব দিঘীতেই প্রতিমা বিসর্জন হয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছুটা নিয়ম বদলালেও মহিষাদল রাজ বাড়ির দুর্গা পুজো আজও তার স্বমহিমায় বিরাজমান।