শাজাহান আলি, পশ্চিম মেদিনীপুর: লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে বিপর্যয় হয়েছে শাসক দলের। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই ক্ষত মেরামত করতেই উঠেপড়ে লাগল রাজ্য সরকার। আট বছর ধরে চেষ্টা করেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ না হলেও লোকসভা নির্বাচনে শাসক দলের বিপর্যয়ের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেলেন লোধা সম্প্রদায়ের নেতারা
বাম আমলের সময় থেকে বরাবরই উপেক্ষিত জঙ্গলমহল ও সংলগ্ন এলাকার লোধা শবর সম্প্রদায়ের লোকজন। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর জঙ্গলমহলের সার্বিক ভোল পাল্টানোর চেষ্টা হলেও লোধা এবং শবরদের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে ধ্স বুঝেই এবার লোধাদের জন্যও সদয় রাজ্য সরকার ৷ শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের লোধাদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প শুরু হচ্ছে ৷
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা মিলিয়ে মোট ১৭ হাজার লোধা এবং শবর পরিবার রয়েছে ৷ প্রায় ৯৪ হাজার লোধা শবর বাস করে এই দুই জেলাতে ৷ যাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত বলে দাবি এই সমস্ত সম্প্রদায়ের নেতাদের ৷ তাই ২০১১ সাল থেকে বারবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে নিজেদের দাবি জানাতে সচেষ্ট হয়েছিল লোধা শবর কল্যাণ সমিতির নেতৃত্বরা। অবশেষে শুক্রবার সেই সুযোগ উপস্থিত হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির সহযোগিতায় শুক্রবার ঝাড়গ্রাম লোধাশবর কল্যাণ সমিতির সভাপতি খগেন মান্ডি ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার লোধা শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েক- সহ একদল প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসনিক সচিব সঞ্জয় কুমার থাডে লোধা শবর সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বেশ কিছুক্ষণ বৈঠকের পরেই একগুচ্ছ নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে।
সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দু' টি পৃথক পৃথক সেল গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে সেলগুলি লোধা এবং শবরদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে। এর পাশাপাশি দুই জেলাতেই লোধা এবং শবর পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভর করতে বিউটিশিয়ান, টেলরিংয়ের মতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া। লোধা শবর অধ্যুষিত বেশকিছু গ্রামে সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে পানীয় জল সরবরাহ শুরু হবে। এর জন্য নব্বই কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই জেলা থেকে প্রায় দু' হাজার লোধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কাজে লাগানো হবে। লোধা শবরদের জন্য বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি তৈরি করা এবং প্রাণী প্রতিপালনেও সমস্ত রকম সহযোগিতা করবে প্রশাসন।
অমূল্য মাইতি বলেন-" লোধা শবরদের বিভিন্ন সমস্যাগুলি শুনে মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এদের রেশন কার্ড সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধানের রাস্তা বের করা হয়েছে। রেশন থেকে পানীয় জল, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প শুরু হচ্ছে কয়েক সপ্তাহেই৷" লোধাদের প্রতিনিধি বলাই নায়েক বলে,'আমরা ২০১১ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে দাবি রাখার চেষ্টায় ছিলাম। এবার সেই সুযোগ হয়েছে। অনেকগুলি দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।'