Murshidabad Artist: সুর হারিয়ে চরম দুরবস্থায় মুর্শিদাবাদের মুসলিম ঘরানার মহিলা শিল্পীরা

সমাজ পরিবর্তনশীল, পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে জায়গা করে নেয় নতুন। তবুও স্মৃতি আঁকড়েই আজ বাঁচার রসদ খুঁজে চলেছেন জেলার এই সাবেকি শিল্পীরা।

Parna Sengupta | Published : Dec 10, 2021 2:59 PM IST

সময় বদলাচ্ছে, তাই 'তাল' রেখে দ্রুত বদলে যাচ্ছে চাহিদাটাও। তাই আধুনিক সুর-তালের দাপটে তাই ফিকে হয়ে পড়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার মুসলিম ঘরানার (Muslim) বিয়ের সাবেক গানের শিল্পীরা (Artist)। মুসলিম বিয়ের (Muslim Marriage) অনুষ্ঠানে সেই চেনা লোক সুর আর আজ শোনা যায়না গ্রাম বাংলায়। জেলাতে মেরে কেটে হাতে গোনা যে আট-নয়টি দল আছে, তারাও আর বায়না পান না মুসলিম মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানে। আর পাবেই ই বা কি করে! সেখানে আজ জায়গা করে নিয়েছে আধুনিক ডিজিট্যাল যন্ত্র চালিত সুর-তাল।

আধুনিক প্রজন্মের কাছে তাই আজ কদর হারিয়েছে সাবেক শিল্পীদের মুসলিম বিয়ের গান।সে এক পরম আনন্দময় মুহূর্ত। 'লাজে মরে দুলহা-দুলহান/তাতেই মজা পান আত্মীয় পরিজন'। এই ভাবেই বর-কনের ঘরের লজ্জা নিবারণে শিল্পীরা রচনা করতেন গান। বিয়েতে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই মুসলিম বিয়েতে বসত গানের আসর। মাঙ্গলিক গায়ে হলুদ থেকে  মেহেন্দি, প্রতি পরতে গানের সুরে ভেসে যেতে অনুষ্ঠান বাড়ী।সাথে দেদার রঙ-রস, খাওয়া দাওয়ার আয়োজন তো উপরি হিসেবে আছেই। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু যিনি তাকে মাঝখানে বসিয়ে হরেক রকমের নাচের সঙ্গে উঠত সুরবহরি। তার সঙ্গে হাততালির অনুসঙ্গ মাতিয়ে দিত বিয়ে বাড়ী।

টানা সাতদিন ধরে রীতি মেনে বিয়ের গানের সুর নাচের মেল বন্ধনে আপ্যায়ন করা হত অতিথিদের। তার জন্যে অবশ্য কোন আলাদা পারিশ্রমিক নিতেন না শিল্পীরা। বরং প্রতিবেশীর মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে হৈ হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখতে তারা নিজেরা পরিশ্রম করতে কোনও ওজর আপত্তি করতেন না। ফলে গোটা বিষয়টির মধ্যে থাকত আলাদা এক আন্তরিকতা। সকলে মিলেমিশে প্রতিবেশীর বাড়ীর অনুষ্ঠানকে নিজের বাড়ীর কাজ মনে করতে কোন দ্বিধা করতেন না এতটুকুও। কিন্তু আজ আধুনিকতার জোয়ারে মুসলিম বিয়ের গানের সাথে যুক্ত শিল্পীরা বিলুপ্তির পথে হাঁটতে শুরু করেছে। 

অথচ এই সময় এই জেলার প্রতিটি গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠান হলেই মহিলা কণ্ঠে ভেসে উঠত "ছিমছাম তুলিতে গেলাম নাচিতে হে শ্যাম/কোলে ঘুমাইল জাদু হে শ্যাম" বা "ছায়া ঢোলক বাজাচ্ছে গৌরী নাচে কদম তালাতে"। এই সবই হচ্ছে এলাকার পরিচিত গানের কলি।দাদি-নানিমার কাছে শেখা মুসলিম বিয়ের গানে এখনও তুফান তোলেন মেহেরুন্নেসা বিবি, রাসিনা বেওয়া, গোলবাণু বিবিরা। সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসছেন সেই সব গান। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে কিংবা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে নয় , লোক সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সব প্রমীলার গেয়ে উঠেন গান।

মঞ্চে এইসব শিল্পীর কদর থাকলেও প্রতিবেশীদের কাছে আজ ওরা  বাতিলের খাতায়। এখন আর বাড়ীতে বাড়ীতে বিয়ের আগে এইসন গানের কদর নেই বললেই চলে। অথচ ১৫-২০ বছর আগে এদেরই গানের বায়না করতে পাত্র কিংবা পাত্রী পক্ষ নতুন গামছার খুঁট খুলে হলুদ মাখা পান সুপারি দিয়ে বিশেষ কায়দায় নিমন্ত্রণ করতেন। সেই আন্তরিক ভরা বায়না পেয়ে তারাও ঘর সংসার ছেড়ে দল বেঁধে হাজির হতেন বিয়ে বাড়ীর মানুষকে আনন্দ দিতে। আর এই আনন্দের মধ্যে দিয়েই পাত্র-পাত্রীর লাজুক মনকে টেনে বের করে আনা হত আত্মীয় পরিজনদের সামনে।

স্মৃতি হাতরে পুরোনো এই সব কথা মনে করতে করতে মেহেরুন্নেসা বিবি, রাসিনা বেওয়া, গোলবাণু বিবিরা কেমন হারানো সুরে ভেসে গেলেন। নস্টালজিক হয়ে আফশোস করে বললেন,"এক সময় বাড়ীর উঠানে সকাল থেকে লোক লাইন দিয়ে আসতেন, কত কথা বলতেন, প্রাণভরে প্রসংশাও করতেন, এখন কেউ মনেও রাখে না, হয়ত কোন দিন আবারও আমরা ডাক পাব লোককে আনন্দ দিতে, সকলে মন দিয়ে আগের মতই শুনবে আমাদের গান"। সমাজ পরিবর্তন শীল, পুরাতন কে বিদায় জানিয়ে জায়গা করে নেয় নতুন। তবুও স্মৃতি আঁকড়েই  আজ বাঁচার রসদ খুঁজে চলেছেন জেলার এই সাবেকি শিল্পীরা।

Share this article
click me!