মুর্শিদাবাদ শহর ও সংলগ্ন এলাকাজুড়ে নবাবি আমলের স্থাপত্য নিদর্শন প্রাসাদ, অট্টালিকা, মন্দির, মসজিদ, স্মৃতিসৌধ, সমাধি রয়েছে। সারা বছর ধরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে এই শহরে।
দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে শীতের আমেজে (Winter Season) ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। আসতে শুরু করেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা (Tourist)। আর বড়দিনে (Christmas) সেই ভিড় আরও উপচে পড়েছিল। মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্যালেস (Hazarduari) ও প্রকৃতিতীর্থ সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। ঠান্ডার (Cold Weather) কারণে সকালের দিকে ভিড় কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজারদুয়ারি ও প্রকৃতিতীর্থের কাউন্টারের সামনে পর্যটকদের লম্বা লাইন লক্ষ্য করা যায়। হাজারদুয়ারির ভিতরে মিউজিয়াম ছাড়াও সবুজ মাঠে পর্যটকদের শীতের দুপুরের রোদে বসে গল্প করতেও দেখা গিয়েছিল। পর্যটকদের ঢল নামায় খুশি পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেশার মানুষ। পুরসভার পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য জল ও শৌচালয়ের পরিষেবা চালুর পাশাপাশি পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছিল বড়দিনে। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ।
মুর্শিদাবাদ শহর ও সংলগ্ন এলাকাজুড়ে নবাবি আমলের স্থাপত্য নিদর্শন প্রাসাদ, অট্টালিকা, মন্দির, মসজিদ, স্মৃতিসৌধ, সমাধি রয়েছে। সারা বছর ধরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে এই শহরে। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেশার মানুষের বক্তব্য, এবার করোনা আবহের জেরে দীর্ঘ মাসের-পর-মাস পর্যটকশূন্য হয়ে কাটিয়েছে মুর্শিদাবাদ। তবে বড়দিনের দিন থেকে পর্যটকদের সংখ্যা দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। ২৫ ডিসেম্বর থেকে পর্যটনের ভরা মরশুম শুরু হয়। তা চলবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই গোটা সময় পর্যটকদের আসা-যাওয়া লেগে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রত্যাশা মতো বড়দিনে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে পর্যটকরা ট্রেন, বাস ছাড়াও ছোটো গাড়ি ও বাসে ঘুরতে এসেছিলেন। দুপুরের পর থেকে পর্যটকদের ভিড় এতটাই ছিল যে, টিকিট কাউন্টারের পাশাপাশি প্যালেসের মিউজিয়ামের গেটেও লম্বা লাইন হয়ে গিয়েছিল।
কলকাতা থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে এদিন ঘুরতে এসেছিলেন নন্দ ঘোষ। তিনি বলেন, "আগে বেশ কয়েকবার ঘুরতে এলেও স্ত্রী ও ছেলে আসেনি। তাই সবাই মিলে ঘুরতে এসেছি।" নদীয়ার নবদ্বীপ থেকে ৩৫ জনের একটি দল ঘুরতে এসেছিলেন। সেই দলেরই এক সদস্য তামান্না খাতুন বলেন, "ইতিহাসে পড়লেও কোনওদিন এখানে আসা হয়নি। হাজারদুয়ারি সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থান দেখে খুব ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করছি।" কান্দি ব্লকের জিয়াদাড়া নৃপেন্দ্রনাথ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে এসেছিলেন স্কুলের শিক্ষকরা।
আর ২৫ ডিসেম্বরের দিন পর্যটকদের এই ভিড় দেখে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী কুণাল দাস বলেন, "ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে জেলায় জাঁকিয়ে শীত পড়লেও পর্যটকরা আসছিল না, দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। কিন্তু এদিন পর্যটকদের ঢল দেখে মনে হচ্ছে, চলতি মরশুমে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলেরই লক্ষ্মীলাভ হবে।" পর্যটকদের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন পিকনিক স্পট এবং আমবাগানে বহু মানুষ পিকনিকে মেতে ওঠেন। এদিকে পর্যটনের মরশুম শুরু হতেই পুরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিষেবা চালু করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, "এই সময়ে পর্যটকদের খুব ভিড় হয়। তাই পানীয় জল সরবরাহের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে মিলিতভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে। শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পর্যটক পরিষেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে।" এছাড়া সপ্তাহব্যাপী বাইরের পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার ঘোষণা করা হয়েছে জেলা পর্যটন দফতরের তরফে। তাঁদের জন্য থাকছে বিভিন্ন ধরনের 'পেড অন' সার্ভিসের ব্যবস্থাও।