এনআরসি আতঙ্ক তিন দশক পর ফিরিয়ে দিল হারিয়ে যাওয়া ভাইকে। যাকে দেখতে গ্রামে উৎসাহী মানুষের ভিড়। খুঁজে পাওয়া ভাইকে আর হারাতে চান না পরিবারের সদস্য থেকে গ্রামের মানুষ। এমনই ঘটনার সাক্ষী বীরভূমের মুরারই থানার গুসকিরা গ্রাম।
শুকতার আলি ওরফে ফুল্টুর বাড়ি মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েতের গুসকিরা গ্রাম। সাত ভাই দুই বোনের সংসার ছিল তাঁদের। ছোটবেলায় মারা যান বাবা হাসমত আলি। ফলে ছোট থেকেই অভাব আস্টেপিস্টে বেঁধে রেখেছিল পরিবারকে। তাই সামান্য কিছু আইয়ের সন্ধানে ১৭ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরেছিল ফল্টু। সে জানিয়েছে, প্রথমে রাজস্থানে কাজ খুঁজতে অস্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করে সে। সেখানে কাজ করলেও তেমন আয় ছিল না। ফলে সেখান থেকে পাঞ্জাবে পৌঁছয়। সেখানেও মহাজনী খপ্পরে পরে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে যায়। এরপর বেশ কয়েকটি রাজ্য ঘুরে হাজির হয় দুর্গাপুরে। সেখানেই ঠিকাদারের অধীনে কাজ শুরু করে দু পয়সার মুখ দেখতে পায় সে। পরে সেখানেই বিয়ে করে সংসার পাতে। বর্তমানে দুই ছেলেমেয়ের বাবা ফল্টু।
ভাই বোনেদের ভুলে নুন ভাত খেয়ে সুখেই চলছিল সংসার। কিন্তু এনআরসি আতঙ্ক তাকে ফিরিয়ে দিল ভাই বোনেদের কাছে। ফুল্টু বলেন, ভেবেছিলাম আর বাড়ি ফিরব না। কিন্তু এনআরসিতে কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তারিয়ে দেওয়ার আতঙ্কে বাড়ি ফিরলাম। ফিরেই ভাইদের কাছ থেকে কাগজপত্র চাইলাম। যাতে বোঝাতে পারি আমরা উদ্বাস্তু নই। আমরা ভারতীয়।
এদিকে তিন দশক পর সোমবার সকালে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গ্রামে ফেরায় প্রতিবেশীরা ভিড় জমান। গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম,প্রনতি দত্ত, আহাসান করিম, ক্ষুদিরাম দত্তরা বলেন, গ্রামের ছেলেকে এতদিন পর দেখতে পেলাম, আনন্দ তো হবেই। তবে চেহেরাই খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। দাদা মুক্তার আলি ওরফে লাল্টু বলেন,ভাইকে দীর্ঘদিন পর পেয়েছি। আর হারাতে চাই না। আমি দুর্গাপুরে গিয়ে সবাইকে গ্রামে ফিরিয়ে আনব। যেটুকু আয় হয় তাই দিয়েই সংসার চালাব সবাই।