কৃষি দফতরের তরফে ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে কৃষকদের নিম্নচাপ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। দফতরের তরফে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের (Cyclone Jawad) প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে উত্তর মালদহের (Malda) কৃষিক্ষেত্রে। এই এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে আমন ধান কাটার কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেলেও শীতকালীন (Winter) ফসল (Crop) এখনও জমিতে রয়ে গিয়েছে। যেসব জমিতে এখনও আমন রয়েছে, তা যত শীঘ্র সম্ভব ঘরে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা (Farmer)। কৃষি দফতরের তরফে ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং (Miking) করে কৃষকদের নিম্নচাপ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি দফতরের তরফে পরিস্থিতির উপর নজরও রাখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে চাঁচলের কলিগ্রাম এলাকার কৃষক সায়েরা বিবি বলন, "প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কৃষি দফতর থেকে মোবাইলে (Mobile) মেসেজ দেওয়া হয়েছে। এবার ধান লাগিয়েছিলাম। সরষে লাগাব। এখন জমি থেকে ধান তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে ফসল বাঁচাতে পারব না। ধানচাষের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। বৃষ্টি (Rain) হলে ঋণ শোধ করা সমস্যা হয়ে যাবে। খুব আতঙ্কে রয়েছি।"
একই বক্তব্য এলাকার আরেক চাষি আবদুল খালেকেরও। তাঁর কথায়, "কৃষি দফতরেপ মেসেজ পেয়ে জমি থেকে তাড়াতাড়ি ধান তুলছি। এখনও মাঠে ধান আছে। আজকের মধ্যে সেটাও ঘরে তোলার চেষ্টা করছি। ১০-১২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ধান তুলে সরষে লাগিয়েছি। তবে বৃষ্টি হলে সরষে চাষ করাও অসম্ভব হয়ে যাবে।"
চাঁচল ১ ব্লকের কৃষি অধিকর্তা দীপঙ্কর দেব জানাচ্ছেন, "এই ব্লকে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। এই মুহূর্তে বেশিরভাগ জমি থেকেই ধান তুলে নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের সেই ধান সঠিকভাবে মজুত করতে বলা হয়েছে। যেসব জমিতে এখনও ধান রয়েছে, তাঁরা যেন দ্রুত তা ঘরে তোলেন। ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর এই জেলায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। যেসব চাষি এখনও আলু লাগাননি, তাঁরা যেন এই সময়কালের পর আলু লাগান। আর যাঁরা ইতিমধ্যে আলু, সরষে, মশুর, ভুট্টা কিংবা সবজিচাষ করছেন, তাঁরা যেন জমির নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখেন। আমরা নিম্নচাপের (Depression) বিষয়ে ইতিমধ্যে মাইকিং করে কৃষকদের সতর্ক করেছি।"
জাওয়াদ নিয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এখন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর পুরি থেকে ৩৯০ কিমি দূরে রয়েছে। প্রথম ৬ ঘণ্টায় উত্তর দিকে যাবে, তারপরে উত্তর পূর্ব দিকে যাবে ও দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। ৫ তারিখ পুরি উপকূলে পৌঁছাবে। তারপর পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে যাবে। পশ্চিমবঙ্গে আর এই ঘূর্ণিঝড়ের কোনও প্রভাব থাকবে না। শুধু আজ রাত থেকে ৫ তারিখ বিকেলে উপকূলের জেলাতে ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে হওয়া বইবে। আজ রাত থেকে দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টি হবে। আগামীকাল দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হবে। মৎস্যজীবীদের ৬ তারিখ পর্যন্ত সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর ৬ তারিখ বিকেল থেকে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করবে।