পরাগ মজুমদার, মুর্শিদাবাদ: কেন্দ্রীয় সরকারের জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। এমনই অভিযোগে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ- আজিমগঞ্জ পুর এলাকায়। কারণ তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধেই তাদের জমি দখল করলে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ তুলেছে রেল দফতর। ওই নির্মাণ নিজেরা না ভেঙে ফেললে বুলডোজার দিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রেল কর্তারা। পুর কর্তৃপক্ষও অবশ্য ওই জমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বলে দাবি করেছে।
রেল দফতর সূত্রে খবর, কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার আজিমগঞ্জ জংশন এলাকায় ডাবল লাইনের কাজের সময় রেলের পক্ষ থেকে তাদের জমিতে থাকা প্রায় ৪০০ ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়। ওই সময় ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পাড়ে তৃণমূল পরিচালিত জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা নিমতলা এলাকায় সাড়ে চার বিঘা এলাকা জুড়ে একটি শিশু উদ্যান নির্মাণের কাজ শুরু করে। অন্যদিকে উচ্ছেদ হওয়া ব্যাবসায়ীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সাড়ে ছয় বিঘোএলাকা জুড়ে একটি বহুতল বাজার তৈরি করতে শুরু করে পুরসভা। সেই মার্কেট কমপ্লেক্সের দোতলাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। রেলের দাবি, যে দু'টি জমির উপরে এই প্রকল্পগুলি হচ্ছে, সেগুলি তাদের জমি। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর পরই তা বন্ধ করার জন্য পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন রেল দফতরের আধিকারিকরা।
রেলের এই দাবি অবশ্য মানতে নারাজ পুরপ্রধান। কোনওভাবেই ওই নির্মাণগুলি ভাঙা হবে না বলে জানিয়ে জিয়াগঞ্জ- আজিমগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, "ওই নির্মীয়মান য়মা মার্কেট হাব ও পার্ক সরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বর্তমানে ওই জমি পুরসভার সম্পত্তি। কোন এক আমলে ওই জমি রেলের থাকলেও, এখন তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। আমরা রেল দফতরকে সব জানিয়েছি।" স্বভাবতই পুরপ্রধানের এই যুক্তি মানছেন না রেল কর্তারা। আজিমগঞ্জের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কানাইয়ালাল যাদব বলেন, "রাজ্য সরকারের দু'টি দফতর রেলের জমি দখল করে একটি পার্ক ও একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তুলছে। আমরা ওই নির্মাণ সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দফতর ও রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছি। এর পরেও ওই ভবন সরিয়ে না নিলে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে তা ভেঙেই ফেলা হবে।"
এদিকে ওই জমি রেলের নাকি রাজ্য সরকারের তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তৃণমুল পরিচালিত জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমুল নেতা শঙ্কর মণ্ডল। তিনি বলেন, "রেলের উন্নয়নের জন্য কয়েক বছর আগে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। আমার সময়কালে অস্থায়ীভাবে ওই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ হটাৎ করেই বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে পুরসভা। ওই সম্পত্তি রেল না রাজ্যের তা নিয়ে সরকারি নথিতেই ধোঁয়াশা রয়েছে। দ্রুত এই বিবাদের নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। "